By Munir Ali
আমার পুত্র মঈন আলির প্রতি তসলিমা নাসরিনের বিদ্বেষী মন্তব্যে আমি আহত এবং শক পেয়েছি। নিজের টুইটকে পরে উনি শ্লেষাত্মক বলে দাবি করেছেন। উনি আরো বলেছেন ধর্মান্ধতার বিরোধী উনি। যদি উনি আয়নার সামনে দাঁড়ান, তাহলে উনি বুঝবেন, উনি যা টুইট করেছেন তা আসলে ধর্মান্ধতার নামান্তর- মুসলিম মানুষদের প্রতি একটা স্টিরিওটাইপ, এক ইসলামভীতি মূলক মন্তব্য। যাঁর নিজের এবং অন্যের প্রতি কোনো সম্মান নেই, তাঁরাই একমাত্র এতটা নীচে নামতে পারেন।
সত্যি কথা বলতে আমি ভীষণ ক্রুদ্ধ। তবে আমি যদি নিজের রাগের বহিঃপ্রকাশ করি, তাহলে উনি ওঁর খেলায় সফল হবেন। যদি ওঁর সঙ্গে কোনোদিন আমার দেখা হয়ে যায়, তাহলে সেদিন ওঁর মুখের ওপরে বলব, আমি ওঁর সম্পর্কে কী ধারণা পোষণ করি। এখন খালি ওঁকে বলব, ডিকশনারি-তে 'শ্লেষাত্মক' শব্দের অর্থ জেনে নিন।
আরো পড়ুন: সিরিয়ায় গিয়ে জঙ্গি হয়ে যাক! মঈন আলিকে বিস্ফোরক আক্রমণ তসলিমার
উনি যা ভাবেন, এটা তা মোটেই নয়। প্রথমে কাউকে বিষাক্ত মন্তব্য করলাম, তারপর নিজের বক্তব্যের সমর্থনে বললাম এটা শ্লেষ ছিল! নিজের এজেন্ডা পূরণ করার জন্য দুনিয়ায় এত ব্যক্তি থাকতে কিনা আমার ছেলেকেই বেছে নিলেন উনি!গোটা ক্রিকেট বিশ্ব জানে, মঈন কেমন ব্যক্তি। যাঁরা জানেন না, তাদের জানিয়ে রাখি, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর থেকে আমার বাবা যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। আমার মা ছিলেন একজন ইংরেজ। ক্রিকেট খেলা আমি দারুণ পছন্দ করতাম, তবে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি। তবে নিজের ছেলেকে পেশাদারি ক্রিকেটার হতে সাহায্য করি। এর আগেও তসলিমা নাসরিনদের মত ব্যক্তিদের সঙ্গে মোলাকাত হয়েছে। তবে একটাই পার্থক্য ওঁরা ইংল্যান্ডেরই।
ওরচেস্টারশায়ারে মঈন যখন ব্যাট করতে নামত, আমি স্ট্যান্ডে বসে থাকতাম। মনে রয়েছে। সেই সময় একজন চিৎকার করে বলেন, দাড়ি কামিয়ে এস! মঈনের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে এর আগেও কিছু কানাঘুষো শুনেছিলাম। এমনকি কোনো কোনো কোচও বলতেন, "ওহে, এটা ইংল্যান্ড। নিজের দাড়ি নিয়ে ভাবনা বন্ধ কর।" আমি উদ্বিগ্ন হয়ে মঈনের কাছে যাই। ও আমাকে বলে, আমি এটাই! কোনো সমালোচনা ওঁকে টলাতে পারবে না। এখানেই ওর চারিত্রিক কাঠিন্য।
আরো পড়ুন: মঈনকে জঙ্গি বলে শ্লেষ! ক্ষোভ উগরে তসলিমাকে নিষিদ্ধের দাবি আর্চারদের
এটা মোটেই সহজ ছিল না। একবার ভারত সফরের আগে একজন কোচ, নাম বলছি না, ওকে বলেছিলেন, দাড়ি ছোট করে কমিয়ে ফেল। মঈন সেই কোচকে বলেছিলেন, "আমি আজকেই ক্রিকেট ছাড়তে প্রস্তুত, তবে নিজের বিশ্বাস ছাড়তে পারব না। যদি আমি খেলি, নিজের বিশ্বাসকে সঙ্গে নিয়েই খেলব। সেই সফরে ও একটাও ম্যাচ খেলেনি। সফরের শেষে যখন ওঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কী শিখলে, ওঁর জবাব ছিল- শুধু নেট অনুশীলন করে গেলাম। এটা ইংল্যান্ডেও হতে পারত।" সবাইকে খেলানো হয়েছিল, তবে ওঁকে বাদ দিয়ে। ও জানত, ওঁর দাঁড়ির জন্যই এই অবস্থা। সেই সময় ওর ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুটা চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। তবে কাউন্টি ক্রিকেটে ঝুড়ি ঝুড়ি রান করতে থাকে। ও এতটাই কঠিন মানসিকতার ছেলে। ও এই ঘটনাও মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলবে। গত কয়েক বছরে ইংল্যান্ড ক্রিকেটে অভাবনীয় পরিবর্তন ঘটেছে। সকলেই মইনকে ভালোবাসে এবং শ্রদ্ধা করে।
আরো পড়ুন: ধার্মিক মঈনের অনুরোধ রাখল ধোনির সিএসকে! তারকার ইসলামিক বিশ্বাসকে বেনজির সম্মান
প্রথাগতভাবে আমি মোটেই ধার্মিক নই। মঈন যখন ইসলামের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ল, সেই সময় ভালোভাবে মনে রয়েছে। মঈন তখন ১৯। ওর খেলা ফলো করত একজন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ওয়ালি। ওই মঈনকে ইসলামের বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছিল। এটা ওকে অনেক শান্ত করে দেয়। ও যত ধর্মে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ত, ততই ধীরস্থির হয়ে পড়েছিল। ওর ব্যক্তিগত জীবন তো বটেই, ক্রিকেট কেরিয়ারেও এটা প্রভাব ফেলেছিল। তাই এই বিষয়ে আমার চিন্তার কিছুই ছিল না।
২০১৪ সালে মঈন ভারতের বিরুদ্ধে খেলতে নামার সময় হাতে রিস্টব্যান্ডে লিখেছিল, 'সেভ গাজা, ফ্রি প্যালেস্টাইন'। ও যেটা বিশ্বাস করত, সেটাই লিখেছিল। তবে যখন ওঁকে বলা হল, এসব করা যাবে না, মেনে নেয়। ও বন্ধুত্ব কখনো ধর্ম মেনে করেনা।
ও যখন ইংল্যান্ডের জার্সিতে অভিষেক ঘটাল, সেই সময় স্পষ্ট মনে রয়েছে। চার উইকেট পড়ে গিয়েছিল। সেই সময় আমার মেয়ে বলল, বাবা মঈন ব্যাট করতে নামছে। আমি ওর ব্যাটিং দেখতে পারিনি। এতটাই নার্ভাস ছিলাম যে হাত-পা কাঁপছিল। দুর্ঘটনাবশত পাশে বসা একজন মহিলার সঙ্গে পায়ে হোঁচট খাই। উনি বলেছিলেন, "আপনি কি নার্ভাস নাকি মিস্টার আলি? আমিও। আমি গ্যারি ব্যালেন্স-এর মা। আমি এইসব স্মৃতিই মনে রাখতে চাই। তসলিমার বিষ নয়!
(As told to Sriram Veera)
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন
মঈনকে দাড়ি কামাতে বলা হয়েছিল! তসলিমা-মন্তব্যে বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি বাবা মুনিরের
নতুন বিতর্কে উত্তাল আইপিএল। সরাসরি তসলিমার টুইট ঘিরে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন ইংল্যান্ড জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। বিতর্কের কেন্দ্রে তসলিমার টুইট।
Follow Us
By Munir Ali
আমার পুত্র মঈন আলির প্রতি তসলিমা নাসরিনের বিদ্বেষী মন্তব্যে আমি আহত এবং শক পেয়েছি। নিজের টুইটকে পরে উনি শ্লেষাত্মক বলে দাবি করেছেন। উনি আরো বলেছেন ধর্মান্ধতার বিরোধী উনি। যদি উনি আয়নার সামনে দাঁড়ান, তাহলে উনি বুঝবেন, উনি যা টুইট করেছেন তা আসলে ধর্মান্ধতার নামান্তর- মুসলিম মানুষদের প্রতি একটা স্টিরিওটাইপ, এক ইসলামভীতি মূলক মন্তব্য। যাঁর নিজের এবং অন্যের প্রতি কোনো সম্মান নেই, তাঁরাই একমাত্র এতটা নীচে নামতে পারেন।
সত্যি কথা বলতে আমি ভীষণ ক্রুদ্ধ। তবে আমি যদি নিজের রাগের বহিঃপ্রকাশ করি, তাহলে উনি ওঁর খেলায় সফল হবেন। যদি ওঁর সঙ্গে কোনোদিন আমার দেখা হয়ে যায়, তাহলে সেদিন ওঁর মুখের ওপরে বলব, আমি ওঁর সম্পর্কে কী ধারণা পোষণ করি। এখন খালি ওঁকে বলব, ডিকশনারি-তে 'শ্লেষাত্মক' শব্দের অর্থ জেনে নিন।
আরো পড়ুন: সিরিয়ায় গিয়ে জঙ্গি হয়ে যাক! মঈন আলিকে বিস্ফোরক আক্রমণ তসলিমার
উনি যা ভাবেন, এটা তা মোটেই নয়। প্রথমে কাউকে বিষাক্ত মন্তব্য করলাম, তারপর নিজের বক্তব্যের সমর্থনে বললাম এটা শ্লেষ ছিল! নিজের এজেন্ডা পূরণ করার জন্য দুনিয়ায় এত ব্যক্তি থাকতে কিনা আমার ছেলেকেই বেছে নিলেন উনি!গোটা ক্রিকেট বিশ্ব জানে, মঈন কেমন ব্যক্তি। যাঁরা জানেন না, তাদের জানিয়ে রাখি, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর থেকে আমার বাবা যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। আমার মা ছিলেন একজন ইংরেজ। ক্রিকেট খেলা আমি দারুণ পছন্দ করতাম, তবে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি। তবে নিজের ছেলেকে পেশাদারি ক্রিকেটার হতে সাহায্য করি। এর আগেও তসলিমা নাসরিনদের মত ব্যক্তিদের সঙ্গে মোলাকাত হয়েছে। তবে একটাই পার্থক্য ওঁরা ইংল্যান্ডেরই।
ওরচেস্টারশায়ারে মঈন যখন ব্যাট করতে নামত, আমি স্ট্যান্ডে বসে থাকতাম। মনে রয়েছে। সেই সময় একজন চিৎকার করে বলেন, দাড়ি কামিয়ে এস! মঈনের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে এর আগেও কিছু কানাঘুষো শুনেছিলাম। এমনকি কোনো কোনো কোচও বলতেন, "ওহে, এটা ইংল্যান্ড। নিজের দাড়ি নিয়ে ভাবনা বন্ধ কর।" আমি উদ্বিগ্ন হয়ে মঈনের কাছে যাই। ও আমাকে বলে, আমি এটাই! কোনো সমালোচনা ওঁকে টলাতে পারবে না। এখানেই ওর চারিত্রিক কাঠিন্য।
আরো পড়ুন: মঈনকে জঙ্গি বলে শ্লেষ! ক্ষোভ উগরে তসলিমাকে নিষিদ্ধের দাবি আর্চারদের
এটা মোটেই সহজ ছিল না। একবার ভারত সফরের আগে একজন কোচ, নাম বলছি না, ওকে বলেছিলেন, দাড়ি ছোট করে কমিয়ে ফেল। মঈন সেই কোচকে বলেছিলেন, "আমি আজকেই ক্রিকেট ছাড়তে প্রস্তুত, তবে নিজের বিশ্বাস ছাড়তে পারব না। যদি আমি খেলি, নিজের বিশ্বাসকে সঙ্গে নিয়েই খেলব। সেই সফরে ও একটাও ম্যাচ খেলেনি। সফরের শেষে যখন ওঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কী শিখলে, ওঁর জবাব ছিল- শুধু নেট অনুশীলন করে গেলাম। এটা ইংল্যান্ডেও হতে পারত।" সবাইকে খেলানো হয়েছিল, তবে ওঁকে বাদ দিয়ে। ও জানত, ওঁর দাঁড়ির জন্যই এই অবস্থা। সেই সময় ওর ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুটা চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। তবে কাউন্টি ক্রিকেটে ঝুড়ি ঝুড়ি রান করতে থাকে। ও এতটাই কঠিন মানসিকতার ছেলে। ও এই ঘটনাও মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলবে। গত কয়েক বছরে ইংল্যান্ড ক্রিকেটে অভাবনীয় পরিবর্তন ঘটেছে। সকলেই মইনকে ভালোবাসে এবং শ্রদ্ধা করে।
আরো পড়ুন: ধার্মিক মঈনের অনুরোধ রাখল ধোনির সিএসকে! তারকার ইসলামিক বিশ্বাসকে বেনজির সম্মান
প্রথাগতভাবে আমি মোটেই ধার্মিক নই। মঈন যখন ইসলামের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ল, সেই সময় ভালোভাবে মনে রয়েছে। মঈন তখন ১৯। ওর খেলা ফলো করত একজন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ওয়ালি। ওই মঈনকে ইসলামের বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছিল। এটা ওকে অনেক শান্ত করে দেয়। ও যত ধর্মে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ত, ততই ধীরস্থির হয়ে পড়েছিল। ওর ব্যক্তিগত জীবন তো বটেই, ক্রিকেট কেরিয়ারেও এটা প্রভাব ফেলেছিল। তাই এই বিষয়ে আমার চিন্তার কিছুই ছিল না।
২০১৪ সালে মঈন ভারতের বিরুদ্ধে খেলতে নামার সময় হাতে রিস্টব্যান্ডে লিখেছিল, 'সেভ গাজা, ফ্রি প্যালেস্টাইন'। ও যেটা বিশ্বাস করত, সেটাই লিখেছিল। তবে যখন ওঁকে বলা হল, এসব করা যাবে না, মেনে নেয়। ও বন্ধুত্ব কখনো ধর্ম মেনে করেনা।
ও যখন ইংল্যান্ডের জার্সিতে অভিষেক ঘটাল, সেই সময় স্পষ্ট মনে রয়েছে। চার উইকেট পড়ে গিয়েছিল। সেই সময় আমার মেয়ে বলল, বাবা মঈন ব্যাট করতে নামছে। আমি ওর ব্যাটিং দেখতে পারিনি। এতটাই নার্ভাস ছিলাম যে হাত-পা কাঁপছিল। দুর্ঘটনাবশত পাশে বসা একজন মহিলার সঙ্গে পায়ে হোঁচট খাই। উনি বলেছিলেন, "আপনি কি নার্ভাস নাকি মিস্টার আলি? আমিও। আমি গ্যারি ব্যালেন্স-এর মা। আমি এইসব স্মৃতিই মনে রাখতে চাই। তসলিমার বিষ নয়!
(As told to Sriram Veera)
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন