India wins t20 World Cup 2024: ১৪তম ওভারে অক্ষর প্যাটেল দিয়ে গেলেন ২৪ রান। ক্রিজে দাঁড়িয়ে তখন তান্ডব চালাচ্ছেন চলতি সময়ের অন্যতম সেরা টি২০ স্পেশালিষ্ট হেনরিখ ক্ল্যাসেন। ম্যাচ ভাবা হয়েছিল ওখানেই শেষ। কিন্তু না। ভারতীয় বোলারদের প্ল্যানিং যে আলাদা ছিল।
ক্রিজে দুই বিধ্বংসী প্রোটিয়াজ ব্যাটারকে থামানোর জন্য বুমরাকে শেষদিকে বাঁচিয়ে রাখার ভরসায় থাকলেন না রোহিত। আগাম ১৫তম ওভারেই নিয়ে এলেন বুমরাকে। তারপর আচমকাই যেন খেলার মোড় ঘুরে গেল। হেনরিখ ক্ল্যাসেন, ডেভিড মিলার দুজনেই বুমরার ওভার সতর্কভাবে কাটিয়ে দেওয়ার পথে হাঁটলেন। দুজনেই কোনও রকমে উইকেট বাঁচিয়ে রাখলেন বুমরার নিখুঁত লেন্থের বলে। সেই ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা তুলল মাত্র ৪ রান।
https://platform.twitter.com/widgets.js
১৬.১ ওভার। সেই ওভারে নিজের কেরিয়ারের সম্ভবত সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ডেলিভারি করলেন হার্দিক পান্ডিয়া। হালকা বিরতির পর খেলা শুরু হয়েছিল। হার্দিককে আক্রমণে আনেন রোহিত। আর হার্দিকের প্ৰথম বলটাই ছিল ওয়াইড স্লোয়ার। সেই বলে ব্যাট ছুঁইয়েই পন্থের হাতে ক্যাচ তুলে বিদায় ভারতের নাভিশ্বাস তুলে দেওয়া ক্ল্যাসেনের। তখন দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের জন্য দরকার ১৮ বলে ২২ রান। সেই ওভারেও হার্দিক দিলেন মাত্র ৪ রান।
https://platform.twitter.com/widgets.js
বুমরাকে কি ১৯তম ওভারের জন্য বাঁচিয়ে রাখবেন রোহিত? না। বুমরার হাতে আবার-ও ১৮তম ওভারে বল তুলে দেন রোহিত। প্ৰথম বলেই মিলারকে প্রায় প্লেড অন করে দিয়েছিলেন বুমরা। মিলার রক্ষা পেলেও বুমরার গুড লেন্থের বল সামলাতে পারেনি মার্কো জ্যানসেন। শেষ বলে মহারাজ ১ রান নেওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ দুই ওভারে জয়ের টার্গেট দাঁড়ায় ২০ রানের। বুমরা নিজের কোটা ফিনিশ করেন শেষ ওভারে মাত্র ২ রান দিয়ে।
১৯তম ওভারে অর্শদীপ খাপ খুলতে দেননি মহারাজ-মিলারকে। প্ৰথম দুই বলেই ডট বল করে চাপ বহুগুণ যে বাড়িয়ে দিলেন প্রোটিয়াজ শিবিরের ওপর। তা আর কাটিয়ে উঠতে পারেননি মিলাররা। সেই ওভারে অর্শদীপ দেন মাত্র ৪ রান।
শেষ ওভারে হার্দিককে ১৬ রান ডিফেন্ড করতে হত। ক্রিজে হাঁকাতেই হত মিলারকে। কোনাকুনি ধেয়ে আসা ফুলটস বল সজোরে হাঁকিয়েছিলেন মিলার। আকাশে উঠে যাওয়া বল বাউন্ডারি পেরোনোর আগেই ধরা পড়লেন অন্য স্কাই-য়ের হাতে।
বাউন্ডারি লাইনের ধারে যেভাবে প্রায় ছয় হয়ে যাওয়া বল দু-বারের চেষ্টায় জাগলিং করে তালুবন্দি করলেন, তা সম্ভবত বিশ্বকাপ ফাইনালের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ ক্যাচের তকমা পাওয়ার দাবিদার। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মিচেল মার্শকে ফেরানো অক্ষরের সেই অতিমানবীয় ক্যাচের মতই এই ক্যাচ ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে জায়গা করে নেবে নিঃসন্দেহে।
আইপিএলের অভিশাপ কাটিয়ে হার্দিক-ও তো ঘুরে দাঁড়াবেন। আবেগঘন ভাবে বার্বাডোজের মাঠে দাঁড়িয়ে হার্দিক বলে যাবেন, "নিজের জন্য এই কীর্তি স্পেশ্যাল হয়ে থাকল। আমার জন্য অনেক কিছুই ঠিকঠাক হচ্ছিল না। আমি বিনা বাক্যে সব মেনে নিয়েছি। জানতাম, নিজেকে চেনানোর একটা মঞ্চ পাব।"
রোহিতের আরও একটা মনস্তাত্বিক লড়াই-ও ছিটকে দিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ক্ল্যাসেনকে থামাতে ভারত মনস্তত্ত্বের সাহায্য নিয়েছিল। ১৬ ওভারে অক্ষর প্যাটেল ২৪ রান বিলিয়ে ভারতকে ম্যাচ থেকে প্রায় হারিয়ে দিয়েছিলেন। সেই সময়েই প্রোটিয়াজ ব্যাটারদের ছন্দে ব্যাঘাত ঘটাতে ভারত ম্যাচ স্লো করে দেয়। ক্যাপ্টেন রোহিতের তুখোড় রণনীতি ম্যাচে ফিরিয়ে দেয় ভারতকে। রোহিতের রণনীতির সার্থক প্রয়োগ ঘটান পন্থ।
১৬তম ওভারের আগে পন্থকে দেখা যায় হাঁটুর অসুবিধার জন্য স্ট্র্যাপ বাঁধতে। পন্থের এই অহেতুক পায়ে স্ট্র্যাপ বাঁধার সময়েই শাস্ত্রী কমেন্ট্রি করার সময় খোলসা করবেন পুরো বিষয়টি। বলে দেন, "ভারত চাইছে ম্যাচ স্লো করে দিতে। ব্যাটারদের রিদম নষ্ট করে দিতে।" বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান ম্যাচে গুলবাদিনকে যে ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল, সেই স্ট্র্যাটেজির প্রয়োগ করেন ঋষভ পন্থ।
শাস্ত্রীর বিশ্লেষণই শেষমেষ সঠিক প্রমাণ হয়ে যায়। সামান্য কয়েক মিনিটের বিলম্ব, সময়ের হেরফের-ই ক্ল্যাসেনের ছন্দে ধাক্কা দিয়ে যায়। তারপর হার্দিক আসবেন। ওয়াইড স্লোয়ারে ফেরাবেন ক্ল্যাসেনকে। এবং আরও একবার 'চোক' করে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা।