দীর্ঘ এক মাস ধরে হিংসার আগুনে জ্বলছে মণিপুর। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে হাসপাতালের মর্গে উপচে পড়েছে মৃতদেহের সারি। এরই মধ্যে তিন দিনের রাজ্য সফরে শান্তি ফেরানোর লক্ষ্যে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আর এর মধ্যেই রাজ্যে শান্তি জন্য জোরালো সওয়াল করেছেন অলিম্পিক স্বর্ণপদক জয়ী মীরাবাই চানুসহ ১১জন ক্রীড়াবিদ। একই সঙ্গে তাঁরা হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন রাজ্যে অবিলম্বে শান্তি না ফিরে এলে পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ হিংসা কবলিত মণিপুরে শান্তি ফিরিয়ে আনতে মণিপুর সফরে যান। সেখানে তিনি দফায় দফায় একাধিক বৈঠক করেন। একই সঙ্গে তিনি ঘুরে দেখেন ত্রাণশিবির। কথা বলেন, ক্ষতিগ্রস্থদের সঙ্গেও। পাশাপাশি রাজ্যে হিংসার ঘটনায় উপযুক্ত তদন্তের আশ্বাস ও ক্ষতিপূরণের কথাও ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আর শাহের সফরের মধ্যেই অলিম্পিক স্বর্ণপদক জয়ী এস মীরাবাই চানু সহ ১১ জন ক্রিড়াবিদ একটি বড় ঘোষণা করেছেন। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী ক্রীড়াবিদরা বলেছেন যে রাজ্যের আঞ্চলিক অখণ্ডতার সঙ্গে কোনরকমের আপস করা হলে তারা সরকার প্রদত্ত পুরষ্কার ফিরিয়ে দেবে। এই ১১ জন ক্রিড়াবিদ অমিত শাহের রাজ্য সফরের সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এই বিষয়ে একটি স্মারকলিপিও জমা দিয়েছেন।
সেই তালিকায় রয়েছেন, পদ্ম সম্মানজয়ী ভারোত্তোলক কুঞ্জরানি দেবী, ভারতীয় মহিলা ফুটবল দলের প্রাক্তন অধিনায়ক বেম বেম দেবী, বক্সার সরিতা দেবীরাও। সমবেত এই চিঠিতে লেখা হয়েছে, হিংসার জেরে বন্ধ রয়েছে একাধিক জাতীয় সড়ক। তার জেরে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে। অবিলম্বে হিংসা থামিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে। নয়তো নিজেদের সমস্ত পদক ও পুরস্কার ফিরিয়ে দেবেন ক্রীড়াবিদরা।এদিকে রাজ্যের ১১ ক্রিড়াবিদ আরও বলেছেন, ‘সাক্ষী মালিক, ভিনেশ ফোগাট এবং বজরং পুনিয়ারা দেশকে গর্বিত করেছে। দিল্লির রাস্তায় যে দৃশ্যসমাজ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে তা নিন্দনীয়, তারা আমাদের দেশকে গর্বিত করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। সরকারের উচিত তাদের সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করা’।
অনিতা চানু এখানে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, 'যদি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আমাদের মণিপুরের অখণ্ডতা রক্ষার আশ্বাস না দেন, তাহলে আমরা ভারত সরকারের দেওয়া পুরস্কার ফিরিয়ে দেব।' তিনি আরও বলেন যে চাহিদা পূরণ না হলে ভবিষ্যতে রাজ্যের খেলোয়াড়রা ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবে না।
আরও পড়ুন: < কুস্তিগীরদের লাগাতার আন্দোলনের জের, প্রথম মুখ খুলল কেন্দ্র, খাপ পঞ্চায়েতের ডাক কৃষক নেতার >
শাহ মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে এক সর্বদলীয় বৈঠকে অংশ নেন। সেই বৈঠকে রাজ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে একাধিক নির্দেশ দিয়েছেন অমিত শাহ। এ ছাড়া পার্বত্য রাজ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। একই সময়ে, কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করেছে যে মণিপুর হিংসায় মৃতদের ১০লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। দাঙ্গায় নিহত ব্যক্তির পরিবারের একজন সদস্যকেও চাকরির আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিপূরণ বাবদ যা খরচ তা অর্ধেক বহন করবে কেন্দ্র। একমাসের বেশি সময় ধরে হিংসায় জ্বলছে মণিপুর।
বেশ কিছুদিন শান্ত থাকার পর ফের নতুন করে হিংসার ঘটনা ছড়িয়ে পড়েছে মণিপুরের একাধিক জেলায়। সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০। স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় কুমার ভাল্লা এবং আইবি ডিরেক্টর তপন কুমার ডেকাও গিয়েছেন অমিত শাহের সঙ্গে। অমিত শাহ রাজ্যে হিংসার কারণ খতিয়ে দেখতে গির্জার আধিকারিকদের পাশাপাশি কুকি সম্প্রদায়ের বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গেও বৈঠক করছেন। একই সময়ে, চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান মঙ্গলবার বলেছেন যে মণিপুরে চ্যালেঞ্জ শেষ হয়নি। আশা করি কিছু সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যাবে। বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে জঙ্গি কার্যকলাপের কোন সম্পর্ক নেই।
এদিকে মণিপুর হিংসার ঘটনায় মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করেন কংগ্রেস নেতারা। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে সহ বেশ কয়েকজন নেতা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে মণিপুরে হিংসা বন্ধে এবং রাজ্যে শান্তির পরিবেশ তৈরি করতে সমন্বিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে হিংসার ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির তত্ত্বাবধানে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে কংগ্রেস।
কুকি স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএসও) দাবি করেছে যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুলিশ প্রত্যাহার সেই সঙ্গে গুয়াহাটি থেকে হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু করার এবং চিকিৎসা সুবিধার জন্য আইজল থেকে হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।ইম্ফল পূর্বের একটি ত্রাণ শিবিরে অমিত শাহ এদিন কথা বলেছেন হিংসায় আক্রান্ত মহিলাদের সঙ্গেও। শাহকে কাছে পেয়ে স্বজন হারানোর যন্ত্রণা বুকে কান্নায় ফেটে পড়েন বেশ কয়েকজন মহিলা। শাহ সকলকে রাজ্যে শান্তি ফেরাতে সরকারের উদ্যোগ এবং একই সঙ্গে হিংসার উপযুক্ত তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন।