লকডাউন অনেকের কাজ কেড়েছে। একের পর এক সংসারে নমে এসেছে চূড়ান্ত আর্থিক অনটন। সংসার চালাতে অনেকেই পেশা বদলাতে বাধ্য হয়েছেন। কোন কোনও পরিবারে নেমে এসেছে ঘোর দুর্যোগ। তেমনই একটি পরিবারের বাস বর্ধমান শহরের টিকরহাটে। কাজ খোয়ানোয় সংসারের খরচ আর চালাতে পারছেন না। কিডনি বিক্রির জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ইচ্ছাপ্রকাশ এক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন যুবকের।
নিজের কিডনি বেচতে চাওয়ার কথা সামাজিক মাধ্যমে তুলে ধরা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ওই যুবকের নাম সম্রাট গোস্বামী। শহর বর্ধমানের টিকরহাটে বাড়ি ভাড়া নিয়ে তিনি থাকেন। বাড়িতে তাঁর স্ত্রী ও একটি সন্তান রয়েছে। বহরমপুরের কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর কম্পিউটারে কোর্স করে সম্রাট একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ডেটা অপারেটরের কাজ করতেন। তবে লকডাউনের সময়ে সেই কাজ চলে গিয়েছে। তারপর থেকে চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে তিনি ও তাঁর পরিবারের সবাই দিন কাটাচ্ছেন।
সংসারের খরচ জোগাতে লোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ শুরু করেছেন সম্রাটের স্ত্রী মনীষা। দু'টি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে তিনি পান ২৪০০ টাকা। সেখানে বাড়ি ভাড়া মেটাতে খরচ হয় তিন হাজার টাকা। এরপর রয়েছে খাওয়াদাওয়া ও অন্যান্য খরচ। সম্রাট বলেন, '' এই পরিস্থিতিতে অনেক চেষ্টা করেও রোজগারের পথ খুঁজে পাইনি। তাই কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিডনির ক্রেতা মিললে মোটা টাকা পাওয়া যাবে। তা দিয়ে রুটি-রুজি জোগাড়ের একটা পথ তৈরি করব।''
সম্রাটের স্ত্রী মণীষা গোস্বামী বলেন, ''নিরুপায় হয়েই পরিবারের সবার কথা ভেবে অন্ন সংস্থানের অর্থ জোগাড়ের তাঁর স্বামী এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খুব কষ্টে আমাদের সংসার চলছে। সরকার বা কোনও সহৃদয় ব্যক্তি যদি সম্রাটকে একটা কাজের ব্যবস্থা করে দেন তাহলেও আমাদের সংসারটা বেঁচে যাবে।''
আরও পড়ুন- পূরণ হয় দীর্ঘদিনের মনস্কামনাও, ঘুরে আসুন এই সতীপীঠে
আর্থিক অনটনে ভুগছে সম্রাটের বোন বনশ্রীর পরিবারও। লকডাউনের কোপে বনশ্রী ও তাঁর স্বামীও কাজ খুইয়েছেন। এর আগে তাঁরও একবার কিডনি বিক্রি করে সংসারের হাল ফেরানোর চেষ্টা করেছিলেন। তবে শেষমেশ তা আর হয়নি।
সম্রাটের বোন বনশ্রী বলেন, ''আমরাও বর্ধমান শহরে বাড়ি ভাড়া করে থাকি। লকডাউনে আমাদেরও কাজ চলে গিয়েছে। শুনেছি কিডনি বিক্রি করলে মোটা টাকা পাওয়া যায়। তাই আমার স্বামী ও আমি দু’জনেই কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তার প্রক্রিয়া বেশ খানিকটা এগিয়ে গেলে বুঝতে পারি আমরা প্রতারণা চক্রের ফাঁদে পড়েছি। তাই আর কিডনি বিক্রি করা হয়নি। আমাদের পরিবারও বহু কষ্টে আছে। ভাই সোশাল মিডিয়ায় কিডনি বিক্রির পোস্ট করেছে। কিন্তু চাইলেই তো আর কিডনি বিক্রি করা হবে না, ক্রেতাও তো পেতে হবে। তাছাড়া ভাই মানসিক ও শারীরিক দিক দিয়ে অসুস্থ। সেদিকটাও মাথায় রাখতে হবে।''
আরও পড়ুন- Daily Horoscope, 19 June 2022: আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন এই রাশির জাতকরা! পড়ুন রাশিফল
জানা গিয়েছে, সম্রাট-বনশ্রীদের বাবা মুর্শিদাবাদ জেলায় পুরসভার কর্মী ছিলেন। সঙ্কটে সেই পুরসভাও তাঁর পাশে দাঁড়ায়নি। অভিযোগ, সব শুনে মুখ ফিরিয়েছেন সেখানকার বিধায়কও। এক হাজার টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা এই অগ্নিমূল্যের বাজারে সামান্যই। তাই ছেলে-বউয়ের মুখ চেয়ে এখন সোস্যাল মিডিয়ায় কিডনির ক্রেতা খুঁজছেন সম্রাট। বিষয়টি জানার পর ওই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। বর্ধমান সদর উত্তর মহকুমা শাসক তীর্থাঙ্কর বিশ্বাস জানিয়েছেন, আইন অনুযায়ী পরিবারটিকে সব রকম সাহায্য করা হবে।