/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2022/10/mal-reaver-1.jpg)
হড়পা বানে ভেসে যাওয়ার সেই মূহুর্ত।
জলপাইগুড়ির মাল নদীর হড়পা বানের দৃশ্য় মনে পড়লে এখনও আঁতকে উঠছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ৫০ বছর ধরে বিসর্জনে হাজির থাকা বিধায়ক বুলুচিক বরাইকের কথায়, 'আমি এই প্রথম এমন ঘটনার সাক্ষী থাকলাম। ভাবলেই গা শিউড়ে উঠছে। অন্যবছর নদীতে নেমে থাকি, এবার আর নামিনি।' ২২ বছর ধরে মাল নদীর পাড়ে থাকা আমীরা মাহতোর চোখের সামনে ভাসছে সেদিনের মর্মন্তুদ ঘটনা। মুহূর্তে আগাম ঘোষণা না করলে সেদিন আরও মানুষের প্রাণ যেত, বললেন আমীরা। শোনালেন সেদিনের উদ্ধারের কাহিনী।
শুখা মাল নদীতে চলছিল দুর্গাপ্রতিমা বিসর্জনের পালা। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আগে ৫টি দুর্গাপ্রতিমার বিসর্জন হয়ে গিয়েছিল। তখন ঘড়ির কাঁটা সন্ধ্যে সাড়ে ছটা। নদীতে সামান্য় ঘোলা জল চোখে পড়তেই বিপদের আঁচ পেয়েছিলেন আমীরা। বছর পঞ্চাশের আমীরার পরিচিতি মীরা নামেই। তৎক্ষণাৎ পুরসভার চেয়ারম্য়ান স্বপন সাহা সহ অন্যদের ঘটনাটি জানান তিনি। যথারীতি নদী থেকে উঠে আসতে মাইকে ঘোষণা হতে থাকে। বিসর্জনে নদীর মাঝে হাজির লোকজনকে সরে আসতে বারংবার অনুরোধ করা হয়। তখন সন্ধ্য়ে সাড়ে ৬টা থেকে ৭টা।
আমীরা মাহাত ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'ঘোষণা হতেই বহু মানুষ বেরিয়ে এলেও অনেকেই নদীর ভিতরে আটকে থাকে। ৭টা ২০ মিনিট নাগাদ হরপা বান একেবারে খরস্রোতার রূপ নিতে শুরু করে। তখন আমি জেসিপি নিয়ে জলের মধ্য থেকে শিশু-মহিলা সহ প্রায় ৩০ জনকে ডাঙায় তুলে নিয়ে আসি। ৪-৫বার এঁদেরকে জেসিপির বাকেটে করে তুলে উদ্ধার করা হয়েছে। আমি ওই জেসিপিতে ড্রাইভারের পাশে ঝুলে ছিলাম। আমাদের সঙ্গে ৫০ জনের উদ্ধারকারী টিম ছিল। এর খরচ বহন করে মাল পুরসভা।' পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের মহাকাল পাড়ার বাসিন্দা মীরা সেদিন উদ্ধারের সময় পায়ে চোটও পেয়েছিলেন। হড়পা বানে নদীর মধ্য়ে ছোট্ট আইল্য়ান্ডে প্রায় শদেড়েক লোক আটকে ছিল। মীরা জানান, দেখলাম পরিমল মিত্র কলেজের দিক থেকে আটকদের পার করা যেতে পারে। তাঁদের প্রত্য়েককে দড়ি ধরে উদ্ধার করা হয়েছে। ছোটদের কোলে করে পার করা হয়েছে। দাড়া সিংও আমাদের সঙ্গে থেকে ভাল কাজ করেছে।
উদ্ধারের কাজে হাত লাগায় এনডিআরএফ, সিভিল ডিফেন্স, ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীরা। মালবাজারেই বাড়ি বছর সাতচল্লিশের দাড়া সিংয়ের। দাড়া সিং বলেন, 'দোড়াদৌড়ি না করলে এত লোক ভেসে যেত না। ৭২ বছরের তপন অধিকারী নাতিকে নিয়ে জলে ভাসছিলেন। আমার আপশোষ তখন নাতিকে তুলে নিই কিন্তু তাঁকে রক্ষা করতে পারিন। স্রোতের সময় আইল্য়ান্ডে আটকে ছিল প্রায় ১৫০ জন। তাঁদের কলেজের দিক থেকে দড়ি দিয়ে উদ্ধার করা হয়। প্রথম দিকে যাঁরা সাতার জানে তাঁদের পার করা হয়। আমরা বলে দিই বাচ্চাদের আমরা পার করিয়ে দেব। বড়রা নিজেরা দড়ি ধরে পার হয়ে যান।' সেদিনের বিপর্যয়ের পর আতঙ্ক এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে আমীরা, দাড়া সিংদের। প্রচারের আলোয় থাকেন না আমীরা মাহাত, দাড়া সিংরা। তাঁদের কথায়, 'আমরা বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে আছি, থাকবো।'