এবার রাম, পরে বাম। এই স্লোগান শোনা গিয়েছিল ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে। তৃণমূলের অভিযোগ ছিল বামেদের ভোট শতাংশের একটা বড় অংশ বিজেপিতে গিয়েছে। পরবর্তীতে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু বামেদের বিধায়ক সংখ্যা শূন্যতে গিয়ে দাঁড়ায়। এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে অর্থাৎ একেবারে তৃণমূল স্তরে ঘাসফুল শিবিরের বিরুদ্ধে বিরোধীরা একজোট হয়ে নির্বাচনে লড়াই করে কিনা সেটাই এখন মূল আলোচ্য বিষয়। মানুষের জোট না অলিখিত জোট যে নামেই বলা হোক।
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারে বারেই অভিযোগ করে এসেছেন বাম, বিজেপি ও কংগ্রেস এক। এবারও বলেছেন বাম, রাম ও শ্যাম এক। বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ তো সরাসরি তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বিরোধীদের এক জোট হতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রকাশ্যে। নীতিগত ও আদর্শগত ভাবে বাম ও বিজেপির অবস্থান একেবারে বিপরীত মেরুতে।
সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিজেপির এজেন্ডাই তো কংগ্রেস মুক্ত ভারত গড়া। সেক্ষেত্রে এই জোট কখনওই সার্বিক ভাবে হওয়া সম্ভব নয় বলেই মনে করে পর্যবেক্ষক মহল। তবে একেবারে বুথস্তরে স্থানীয় ভাবে কোথাও কোথাও জোটের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরই ২০২৪-এ লোকসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনে বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে হঠানোই প্রধান লক্ষ্য কংগ্রেস-সিপিএমের। রাজনৈতিক মহলের মতে, ঘোষণা করে জোট তো হবেই না, বরং ফলপ্রকাশের পর যার ঝুলিতে আসন বেশি থাকবে বিরোধী দল হিসাবে এরাজ্যে লোকসভা নির্বাচনে সেই দল ফায়দা বেশি পাবে। বিজেপি সাংসদ জোটের আহ্বান জানালেও সেই গুড়ে বালি বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
আরও পড়ুন- অখিল বচন: রাজ্যের আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে নিয়ে কি বললেন?
পর্যবেক্ষকমহল মনে করছে, তবে এটাও ঠিক তৃণমূল স্তরের বিরোধী নেতৃত্ব নিজেদের মধ্যে অলিখিত আসন বাটোয়ারার খেলা খেললে চাপে পড়তে পারে তৃণমূল কংগ্রেস। বিরোধী জোটের কথা বারে বারে প্রকাশ্যে বলে তাঁদের নীতিহীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করেই বাংলার রাজনীতি এখনই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ। বিরোধীরা বুথ স্তরে কি করবে তা বুঝে ওঠার আগেই তৃণমূল দলের পুরনো সৈনিকদের ফের সামনের সারিতে নিয়ে এসেছে। অভিজ্ঞ রাজনীতিকদের ওপর ভরসা করছে ঘাসফুল শিবির। ২০২১-এ রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরেও দেড় বছরের মধ্যে নানা ইস্যুতে জেরবার অবস্থা তৃণমূল কংগ্রেসের। রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ, ঘোষণা না করলেও বিরোধীরা চাইছে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে নীচু স্তরে কর্মীদের মধ্যে অলিখিতি জোট, কেউ বলছেন মানুষের জোট। রাজনীতির খেলায় এমন জোট বহুকাল ধরেই চলে আসছে। এছাড়া পঞ্চায়েতের লড়াইয়ে টিকে থাকা যে খুব কঠিন তা তাঁরা উপলব্ধি করছে।