সেদিনের সেই ভয়াবহতাকে কাটিয়ে উঠতে পারছেন না অনেকেই। ২রা জুন সন্ধ্যায় ট্রেনদুর্ঘটনা মুহূর্তে সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিল হাজার হাজার পরিবারের। করমন্ডল দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যে শুরু হয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তদন্তভার হাতে নিয়ে সিবিআই। ইতিমধ্যে সামনে এসেছে সিগন্যালিং সিস্টেমের গাফিলতির তত্ত্ব। সেদিনের সেই দুর্ঘটনা প্রাণ কেড়েছে ২৮৮ জনের। কেউ হারিয়েছেন বাবাকে, কেউ বা মাকে। কেউ আবার তাদের প্রিয়জনকে। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে অজস্র পরিবারের।
ভবিষ্যতের চিন্তায় যখন দিশাহীন পরিবার ঠিক তখনই বিরাট ঘোষণা করে নজির গড়েছে রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মিশন ব্যারাকপুর। ওড়িশার বালেশ্বরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা যেসকল শিশু তাদের অভিভাবকদের হারিয়েছে তাদের ১৮ বছর পর্যন্ত পড়াশুনার যাবতীয় দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মিশন ব্যারাকপুর। মিশনের তরফে এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে সমাজের সকল স্তরের মানুষজন। ট্রেন দুর্ঘটনার মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মিশন ব্যারাকপুরের প্রধান সচিব স্বামী নিত্যরূপানন্দজি মহারাজ এক ট্যুইটবার্তায় মিশনের মহান উদ্দোগের কথা জানানোর পাশাপাশি দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধাও জ্ঞাপন করেন।
এবিষয়ে স্বামী নিত্যরূপানন্দজি মহারাজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ওড়িশার বালেশ্বরের মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে আমাদের সবাইকে। যে সকল শিশুরা এই দুর্ঘটনায় তাদের পরিবার, প্রিয়জনকে হারিয়েছেন তাদের জন্য দরজা খুলে দিয়েছে রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মিশন। তারা চাইলে রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মিশনের যেকোন শাখায় তাদের পড়াশুনা অথবা ভোকেশানাল ট্রেনিং নিতে নিতে পারবেন একেবারে বিনামূল্যেই’।
ট্রেন দুর্ঘটনার কারণে যাতে কোন শিশুর ভবিষ্যৎ যাতে নষ্ট না হয়ে যায় তার জন্য রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মিশনের এমন উদ্যোগ বলেও জানান তিনি। শিশুর ভবিষ্যৎ ঘিরে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তা দূর করতেই ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলে ও মেয়েদের পড়াশুনার পাশাপাশি হাতের কাজের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে তুলতে বিশেষ প্রয়াস নিয়েছে রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মিশন।
এখনও পর্যন্ত ৪২৭ জনের আবেদন জমা পড়েছে। পাশাপাশি রাজ্য সরকারের তরফেও এই সংক্রান্ত এক তালিকা পাঠানো হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন স্বামী নিত্যরূপানন্দজি মহারাজ। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকারের পাশাপাশি অনেকেই সরাসরি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আমরা ইতিমধ্যেই প্রয়োজন অনুসারে ৫২ জনকে চিহ্নিত করেছি। আপাতত তিনজন রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মিশনে ভর্তিও হয়েছেন” ।