চারিদিকে ইংরেজি বছর শেষের মুখে বর্ষ বরণের পরিবেশ। তারই মাঝে এক ভিন্ন ছবি ইন্দো-বাংলা সীমান্তের মুর্শিদাবাদে। লাফিয়ে লাফিয়ে বছর শেষে আদালতগুলিতে জমে থাকা মামলার সংখ্যা বেড়ে দেড় লাখের গন্ডি ছাড়ানোয় হাঁসফাঁস করছে জনজীবন। গড়ে এ বছর দশ হাজারের বেশি বকেয়া মামলা বৃদ্ধি পেয়ে মোট সংখ্যা ১,৫৩,০০০ টপকেছে।
জেলার লালবাগ, বহরমপুর, জঙ্গিপুর, কান্দি, সর্বত্রই বেড়ে চলেছে বিচারপ্রার্থীর সংখ্যা। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন সীমান্তের আম জনতা থেকে শুরু করে আইনজীবীদের একাংশও। কিন্তু নতুন বছরে আশার কথা হলো, আরও দুটি আদালতের অনুমোদন পাওয়া গিয়েছে, যার ফলে কিছুটা হলেও কমবে এই দমবন্ধ করা চাপ।
লালবাগ আদালতের বিচারপ্রার্থী ইসলামপুরের কাউসার শেখ, ভগবানগোলার হুমায়ন কবীরেরা বলেন, "বছর শেষ হতে চলল, অথচ আমাদের জমে থাকা মামলা বছরের পর বছর বেড়েই চলেছে, একে তো ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের সংখ্যা কম, তার ওপর যে এত বিপুল মামলার কবে নিষ্পত্তি হবে, আমারা যারা সাধারণ মানুষ তারা কবেই বা বিচার পাব, তা কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।"
ফৌজদারি মামলার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,১১,৯১৬-তে
অবস্থানগত কারণে এমনিতেই সীমান্তের এই জেলায় নিত্যদিন পাচার, চোরাচালান, অনুপ্রবেশের মতন মামলার শেষ নেই, সেখানে দাঁড়িয়ে অন্যান্য বিষয় সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা ধরলে তার হিসেব রাখাই মুশকিল।
মামলার এমন হালের কারণ হিসেবে জেলা পুলিশের কর্তাদের একাংশ অহরহ আইনজীবীদের কর্মবিরতিকে অন্যতম বলে চিহ্নিত করছেন। ২০১৬ সালের শেষে জেলায় দেওয়ানি মামলার সংখ্যা ছিল ৩২,৪৮৪, ফৌজদারি মামলা ছিল ১,০১,৭১৫। ২০১৮ সালের শুরুতে দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে সেই সংখ্যাটা ছিল ৩২,৩৫৬। কিন্তু ফৌজদারি মামলার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,১১,৯১৬-তে। তথ্য বলছে, বর্তমানে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জেলায় জমে থাকা মামলা রয়েছে ১৬,৭০৯। সেগুলির কবে নিষ্পত্তি ঘটবে, কেউ জানেন না।
মহিলাদের ক্ষেত্রে দায়ের করা মামলার চিত্রটা আরও করুণ। যেখানে মুর্শিদাবাদেই এককভাবে ৩০,৩৪৩ টি এমন মামলা জমে রয়েছে যেগুলি দায়ের করেছেন কেবলমাত্র মহিলারা।
আদালতের সংখ্যার অপ্রতুলতার পাশাপাশি বিচারক, অন্যান্য বিচার কর্মীর সংখ্যা সহ একাধিক সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়ে এরই মাঝে আশার কথা শোনালেন লালবাগ আদালতের বিশিষ্ট ক্রিমিনাল আইনজীবী দেবাঞ্জন মজুমদার। তিনি জানান, "এটা নিয়ে কোন দ্বিমত নেই যে মুর্শিদাবাদ জেলায় ক্রমশ দিনে দিনে বেড়ে চলেছে মামলা, আর সেই দিকে নজর দিয়েই লালবাগে নতুন দুটি এজলাস, এসিজেএম-২, জেএম-২ এর অনুমোদন মিলেছে। ফলে খুব শীঘ্রই তা চালু হতে চলেছে।"