নতুন বছরে নানা প্রজেক্ট নিয়ে তৈরি পরিচালক-প্রযোজকরা। কিন্তু বছর শেষে একবার মিলিয়ে নেবেন না খারাপ-ভালর পরিসংখ্যানটা। কোনও বাংলা ছবি কি এবছর খ্যাতির শীর্ষে উঠতে পারল? দর্শকের প্রতিক্রিয়া, বক্সঅফিস পরিসংখ্যান সবের কাঁটা ঝুঁকে না-এর দিকেই। কোনও কোনও ছবির ব্যবসায়িক সাফল্য এসেছে ঠিকই কিন্তু দর্শক মন ছুঁতে পারেনি। আবার কোনও ছবি হলই পায়নি বা পেলেও টিকতে পারেনি। তার অবশ্য অনেক নেপথ্য কারণ রয়েছে। প্রযোজকদের সংঘাতও রয়েছে। ব্যবসায়িক সাফল্য হোক কিংবা সমালোচকদের প্রশংসা চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক এবছরের সেরার তালিকায়-
কবীর
এবছরে বাংলা ছবিতে ভাবনার অভাব ছিল। কবীর দর্শকের নিরিখে হিট ছবি। দুরন্ত এক্সপ্রেসের মুম্বই-হাওড়া ট্রেনসফরে জোরালো চিত্রনাট্য। আলতাফ, ইয়াসমিন ও ইমতিয়াজ- এই তিনটি চরিত্রকে ঘিরে টানটান উত্তেজনায় তৈরি অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের কবীর। স্বীকার করতে হয় অভিনেতা হিসেবে নিজেকে ভেঙেছেন দেব। তবে এত কিছু সত্ত্বেও বক্সঅফিসে নিজের প্রত্যাশিত জায়গা করে নিতে ব্যর্থই ছিল।
দৃষ্টিকোণ
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের এই ছবির গল্পের অন্দরে গল্প। সম্পর্কের টানাপোড়েনে তৈরি হয়ে ওঠা ভালোবাসার গল্প। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি মানেই দর্শকের প্রত্যাশার পারদ চড়তে থাকে। বক্সঅফিসের তালিকাতেও জোরদার ফল পেয়েছে এই ছবি। ছক ভাঙা অভিনয়ে তাক লাগিয়েছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ও।
উমা
সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের উমা আবেগকে উস্কে দিয়েছিল। পরিচালক ফলও পেয়েছিলেন প্রত্যাশা মতোই। সাত বছরের ইভান লিভারসেজের ইচ্ছেপূরণের গল্প পর্দায় পছন্দ করেছিলেন দর্শক। বক্সঅফিসেও অপ্রত্যাশিত সাড়া পেয়েছিল এই ছবি। আক্ষরিক অর্থেই হিট ছবির তালিকার একনম্বরে উমা।
এক যে ছিল রাজা
সৃজিত মুখোপাধ্যায় একটা ছেড়ে দুটো ছবি বক্সঅফিসে দাঁড়িয়ে গেছে। বলা যায় সাফল্যের মন্ত্রটা পেয়ে গেছেন তিনি। চেনা গল্পকেই, নতুন ছকে দেখানোর চেষ্টা করেছেন পরিচালক। যিশুকে নয়া অবতারে এনেছেন তিনি। পুজোয় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে এগিয়ে গিয়েছে বাকি ছবির থেকেও।
ব্যোমকেশ গোত্র
অরিন্দম শীলের ব্যোমকেশ ফ্র্যাঞ্চাইজির এই ছবি বাকি ব্যোমকেশ সিরিজের মতোই চর্চিত হয়েছে এবছর। আবির চট্টোপাধ্যায়কে ছাপিয়ে সামনে এসেছে অর্জুন চক্রবর্তী ও ছবির চিত্রনাট্য। অরিন্দম শীল আবার তাঁর সিনেম্যাটিক, বিউটিন দ্য লাইনস স্টাইলে হিট দিলেন বক্সঅফিসে। দর্শকও পছন্দ করেছে এই ছবি।
রসগোল্লা
বছরের শেষটা মিষ্টি মুখ করেই শেষ করালেন পাভেল। বেপরোয়া ইচ্ছা, অদম্য জেদকে সঙ্গী করে নবীনচন্দ্র দাশের রসগোল্লা রেসিপি দর্শক ভালই পছন্দ করছে। পাভেল অতি যত্নসহকারে পর্দায় রচনা করেছেন বৈকুন্ঠভোগ, রূপচাঁদপক্ষী, আমসন্দেশের জনককে। শেষ পাতে সেই ছবির ডিসক্লেমারে ফিরে এসে দর্শককেও বলতে হয়েছে- সিগারেট, মদ খাবেন কেন? খেলে ভাল কিছু খান রসগোল্লা খান।
এ তো গেল বিগ শট ছবির কথা। তবে তুলনায় কম বাজেটের ছবিও টলিউডে প্রতিযোগীতা টানটান রেখেছে বছরভর। রেনবো জেলি-হলে বেশিদিন থাকতে না পারলেও দর্শক হৃদয় জয় করতে সক্ষম। চর্চায় এসেছে অভিষেক সাহার উড়নচণ্ডী। এদিকে গুডনাইট সিটি, গুপ্তধনের সন্ধানের মতো ছবি সারাবছর বক্সঅফিসে টক্কর দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। আহারে মন, হামি-র মতো ছবির কোনটাই হিটের তকমা পেল না। কিন্তু দর্শকের একাংশ দিব্যি দেখেছে। মাটি, হইচই আনলিমিটেড, জেনারেশন আমি কোনটাই জমতে পারেনি হলে। তবে টেস্ট ম্যাচে ঠিক রান করে গেছে মনোজ দে-র অদ্ভুত বাড়ি।