শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ান খানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নার্কোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো-য় খারিজ হয়ে যাওয়াটা যেন এনসিপি নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী নবাব মালিক-কে লাইফ লাইন দিয়েছে। যিনি এখন জেলবন্দি। এ বছরের ফেব্রুয়ারির শেষে সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে গ্রেফতার করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। দাউদসঙ্গীর সঙ্গে জমি কেনাবেচার গুরুতর অভিযোগে এই গ্রেফতার। কিন্তু মাদক মামলায় আরিয়ান খানের ছাড়া পাওয়ার সঙ্গে নবাব মালিকের কোথায় যোগাযোগ? জটিল যোগাযোগ সন্দেহ নেই। তাতেই আলো ফেলা যাক আসুন।
গত অক্টোবরে নবাব মালিকই সমীর ওয়াংখেড়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন, যিনি এই আরিয়ান খানের বিরুদ্ধে মামলায় প্রধান তদন্তকারী ছিলেন। প্রাক্তন নার্কোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো অফিসার ওয়াংখেড়ে এখন কেন্দ্রের তোপের মুখে পড়েছে। তাঁর করা তদন্তের বিরুদ্ধেই খড়হস্ত কেন্দ্র, ওয়াংখেড়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মালিকের অভিযোগটা কী ছিল? দলিতদের জন্য সংরক্ষণের যে নীতি, তাতে নিজেকে এসসি দেখিয়ে সুযোগ নিয়েছেন ওয়াংখেড়ে। তফসিলি জাতি ভুক্তদের জন্য ১৫ শতাংশ সংরক্ষিত। কিন্তু ওয়াংখেড়ে দলিত নন, মুসলিম।
কী অভিযোগ?
মালিকের কথা অনুযায়ী, সমীর ওয়াংখেড়ের বাবা দানদেব কাচরু ওয়াংখেড়ে তফসিলি জাতি-ভুক্ত ছিলেন, তবে বিয়ের আগে। জাহিদা বেগমকে বিয়ে করার জন্য তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। সমীরের জন্ম ১৯৭৯ সালে। সমীরের বার্থ সার্টিফিকেট প্রকাশ করে মালিক দেখান সেখানে তাঁর বাবার নাম লেখা, দাউদ কে ওয়াংখেড়ে।
মালিকের দাবি, সমীর বড় হয়ে ওঠেন এক জন মুসলমান হিসেবে। ২০০৬ সালে মুসলিম হিসেবেই তাঁর বিয়ে হয়। সমীরের নিকাহের তথ্যও বার করে এই দাবি তিনি করেন। সেই ডকুমেন্টসের তারিখ-- ৭ ডিসেম্বর, ২০০৬। যেখানে সমীর দাউদ ওয়াংখেড়ে এই নাম লেখা রয়েছে দেখা যায়।
এসসি কোটা নিয়ে কী অভিযোগ?
মালিকের অভিযোগ, একজন মুসলিমকে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় নির্বাচিত করা হয়েছে এসসি কোটায়। যার হকদার সমীর নন। ডিপার্টমেন্ট অফ পার্সোনেল অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে ২০০৭ সালে যাঁরা সিএসই পাশ করেছেন, সেই তালিকায় ওয়াংখেড়ের নাম ৫৬১ নম্বরে। এসসি কেটাগরিতে তিনি ২০০৮-এর ব্যাচে ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিসের অফিসার নিযুক্ত হন। এসসি কোটায় ১৫ শতাংশ সংরক্ষিত থাকলেও, যে সব হিন্দু এসসি ধর্মান্তরণে মুসলমান বা খ্রিস্টান হন, তাঁরা এসসিভুক্ত হন না।
২০০৪ সালে সেন্টার ফর পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন এই ধর্মান্তরণ এবং সংরক্ষণ ইস্যুটিতে তোলে। তাদের বক্তব্য, হিন্দু শিখ বৌদ্ধ এসসি স্টেটাস পাচ্ছেন, কিন্তু খ্রিস্টান মুসলিমরা তা পাচ্ছেন না। ২০০৮ সালে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন দলিত মুসলিম এবং দলিত খ্রিস্টান এসসি-এসটি-তে দুটি আলাদা ভাগের কথা বললেও তা গ্রহণ করা হয়নি। তার আগের বছর, ২০০৭-এ, রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশন বলে, ধর্ম ও এসসি-এসএসটি স্টেটাস আলাদা করে দেওয়া উচিত। সব ধর্মেই দলিতের মাপকাঠি একই হওয়া উচিত বলে মত জানায়। যদিও কেন্দ্র সেই সুপারিশ গ্রহণ করেনি। কারণ, কেন্দ্রের মতে, কমিশনের কাজ বাস্তবানুগ নয়। এ ক্ষেত্রে কোনও ফিল্ড স্টাডিও করা হয়নি বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়। ২০২০ সালে সুপ্রিম কোর্ট ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ দলিত খ্রিস্টানদের এ সংক্রান্ত আবেদন বিচারবিশ্লেষণ করে দেখতে সম্মত হয়। যদিও তা এখনও ঝুলে রয়েছে।
২০০৬ সালে সামাজিক ন্যায়বিচার এবং ক্ষমতায়ন মন্ত্রী মীরা কুমার প্রস্তাব করেন দুই ধর্ম-সম্প্রদায়ের মধ্যে বিয়ের ফলে সন্তানটি এসসি-ভুক্ত হবে, যদি বাবা-মায়ের মধ্যে যে কেউ এসসি হয়ে থাকেন। ২০০৮ সালের এপ্রিলে মন্ত্রিসভায় পেশ করার কথা থাকলেও, এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় শেষ মুহূর্তে। এর পিছনে যুক্তি ছিল, সমাজের একাংশের কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে এই সিদ্ধান্ত, এমনকি জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনও এর বিরুদ্ধে যেতে পারে।
Read story in English