অযথা একগাদা ফুলের তোড়া, বাদ। ঘড়ি ঘড়ি নিজের অফিসের এসি মেশিন পাল্টানো, চলবে না। সরকারি খরচে ব্যয়বহুল বেসরকারি হোটেলে বৈঠক, নো। রাজ্য সরকারের ব্যয় সঙ্কোচ নীতির প্রেক্ষিতে এই ধরণের আরও বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে আমলাদের ওপর। সোজা কথায়, এখন থেকে তথাকথিত বিলাসিতায় অযথা অর্থব্যয় করতে পারবেন না সরকারি আমলারা। এ কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং।
সম্প্রতি রাজ্য়ের মুখ্য়সচিব মলয় কুমার দে-র নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার সেই কমিটি একটি নির্দেশিকা তৈরি করে। ওই নির্দেশিকায় বিভিন্ন সরকারি দপ্তরগুলি কী করবে এবং করবে না তার উল্লেখ রয়েছে। সেই নির্দেশ পাঠানো হয়েছে রাজ্য়ের সমস্ত সরকারি দপ্তরে, এবং সেগুলি কার্যকর করতে কড়া নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য় সরকার।
আরও পড়ুন: তোলাবাজি আটকাতে আশুতোষে মমতা, জয়পুরিয়ায় পার্থ
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্রেতা সুরক্ষামন্ত্রী সাধন পান্ডে বলেন, "এটি রাজ্য সরকারের একটি অন্যতম পদক্ষেপ। কোটি কোটি টাকা শুধুমাত্র ফুলের তোড়ার মতো অপ্রয়োজনীয় জিনিসে ব্যয় করার কোনও প্রয়োজনই নেই। পরিবর্তে, জনকল্যাণমূলক প্রকল্পে অর্থব্যয় করা উচিত, এতে জনগণের সুবিধা হবে। দরিদ্র, উপজাতি, যুবক, নাবালক এবং সংখ্যালঘুদের জন্য ইতিমধ্যেই একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সরকারের তরফে।“
ঘন ঘন ভ্রমণে বা অাধিকারিকদের কলকাতায় ডেকে এনে অপচয়ের' কোন কারণ নেই বলেও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সরকার মনে করছেন, প্রয়োজনে ভিডিও কনফারেন্স কলে কাজ সেরে নিতে হবে। এছাড়াও অফিসের অপ্রোয়জনীয় সৌন্দর্যায়ন, এবং ব্যয়বহুল আসবাবপত্র কিনে অর্থব্যয় করাও নিষিদ্ধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্য়মন্ত্রীর আরও নির্দেশ, তাঁর বা মুখ্য়সচিবের অনুমোদন ছাড়া কোন আমলাকে বিদেশ সফরের অনুমতি দেওয়া হবে না। দিল্লি বা অন্যান্য রাজ্যেও কোন কাজে ঘনঘন যেতে পারবেন না সরকারি কর্তারা।
আরও পড়ুন: গো-রক্ষার নামে হিংসা ঠেকানো রাজ্যেরই দায়িত্ব: সুপ্রিম কোর্ট
এসব ছাড়াও ব্য়য় সঙ্কোচ করতে আরও কিছু পন্থা অবলম্বন করতে চলেছে সরকার। জরুরি পরিষেবা ছাড়া নিজেদের প্রয়োজনে সরকারি টাকায় গাড়ি কেনার ওপরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রাজ্য। নির্দেশে বলা হয়েছে, প্রয়োজনে 'পুল কার' ব্যবহারে অভ্যস্ত হতে হবে আধিকারিকদের। সরকারি বৈঠক বা যেকোন অনুষ্ঠানে যতটুকু সাজসজ্জা না করলেই নয়, ঠিক ততটুকুই করতে হবে। পাশপাশি আর্থিক খরচ কমাতে খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে নুন্যতম ব্য়বস্থা রাখতে হবে। এমনটাই জানিয়েছেন নবান্নের এক আধিকারিক।
সূত্রের খবর, রাজ্য়ের ব্য়য় কমাতে ৫ জুলাই ফের বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই দপ্তর-ভিত্তিক কর্মী সংখ্য়া নিয়ে তিনটি বিভাগ চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্য সরকার। কম, বেশি এবং অতিরিক্ত লোকবল কী রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে। শুধু তাই নয়, সরকারের সমস্ত প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে সম্পূর্ণ করতে হবে। একইসঙ্গে বরাদ্দ অর্থের অতিরিক্ত ব্য়য় কোনভাবেই করা যাবে না। এসব দিকে কড়া নজর রাখবে সরকার। বর্তমানে প্রকল্পগুলির আর্থিক দিক নিয়েও আলোচনা করবেন সরকার।