ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল ইন্দোনেশিয়া। সোমবার পশ্চিম জাভা অঞ্চল কেঁপে ওঠে। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৫.৬। পশ্চিম জাভার শহর সিয়ানজুরের প্রশাসনিক আধিকারিক হারমান সুহারম্যান জানিয়েছেন যে তাঁদের এলাকাই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল। ভূমিকম্পের পরই খবর আসে যে ৪৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্ততপক্ষে ৩০০ জন। সুহারম্যান আরও বলেন, 'মৃত এবং আহতর সংখ্যা বাড়তে পারে। কারণ, যে তথ্য বলছি সেটা কেবল একটা হাসপাতালের। সিয়ানজুরে মোট চারটি হাসপাতাল আছে। বাকিগুলোর খবর আসলে পুরো তথ্যটা বলতে পারব।'
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের পরই স্থানীয় বাসিন্দারা বহুতল থেকে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় অন্ততপক্ষে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, এটা নিশ্চিত। যে অঞ্চল এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল, সেই সিয়ানজুর ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে। ইন্দোনেশিয়ার ভূবিজ্ঞান বিভাগ জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে অন্তত ১০ কিলোমিটার গভীরে। তার ফলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে যে সুনামির কোনও সম্ভাবনা নেই।
ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী জানিয়েছে যে, ইন্দোনেশিয়ার বেশ কয়েকটি বোর্ডিং স্কুল এই ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মোট কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার পরিমাণ নির্ধারণের কাজ চলছে। স্থানীয় গণমাধ্যমে দেখা গিয়েছে যে সিয়ানজুরে ভূমিকম্পের পরই বিভিন্ন রাস্তায় মানুষের জটলা। বাসিন্দারা সবাই যেন বাড়ি থেকে রাস্তায় চলে এসেছেন। মুচলিস নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পর সময় অফিসের দেওয়ালগুলো নড়ছিল। ছাদ দুলছিল। বাধ্য হয়ে সহকর্মীদের নিয়ে তাঁরা রাস্তায় চলে আসেন।
আরও পড়ুন- ইসলামে নিষিদ্ধ বলেই কি বিশ্বকাপে মদ্যপানে নিষেধাজ্ঞা কাতারে? বিপাকে ফুটবলপ্রেমীরা
এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, 'ভূমিকম্পের পর প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিলাম। ভাবছিলাম, দেওয়ালগুলো যেন ঘাড়ের ওপর এসে পড়বে। আবার এমনটা হলে কী করব? সেই ভয়টা আবার এখনও যায়নি।' অনেককে ভূমিকম্পের পর রাস্তায় এসে আতঙ্কে বমি করতেও দেখা গিয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার প্রশাসন সূত্রে খবর, বাসিন্দাদের এই আতঙ্ক নেহাত মিথ্যে নয়। ভূমিকম্পের পর অন্তত ২৫ বার আফটার শক ঘটেছে। কেঁপে উঠেছে গোটা এলাকা।
জাকার্তা ৭৫ কিলোমিটার দূরে হলেও, সেখানেও স্পষ্টভাবেই ভূমিকম্পের প্রভাব পড়েছে। ইন্দোনেশিয়ার রাজধানীতেও আতঙ্কে রাজপথে বেরিয়ে এসেছেন বাসিন্দারা। জাকার্তার বাসিন্দাদের অনেকেই সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন, তাঁদের চোখের সামনে দেওয়াল থেকে আসবাবপত্র, সব দুলে উঠেছে। যার জন্য ভয় পেয়ে তাঁরা বাধ্য হয়েছেন রাস্তায় বেরিয়ে আসতে। ইন্দোনেশিয়া ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলগুলোর অন্যতম। এখানে হামেশাই ভূমিকম্পের খবর মেলে। এমনকী ভূমিকম্পের জেরে আগ্নেয়গিরি জেগে ওঠার নজিরও রয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়।