দিল্লির হিংসায় এবার পুলিশের চার্জশিটে নাম উঠল প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা সলমন খুরশিদের। তার সঙ্গে চার্জশিটে নাম রয়েছে মাওবাদীদের পলিটব্যুরো সদস্য কবিতা কৃষ্ণণ, ছাত্রনেত্রী কাওয়ালপ্রীত কৌর, বিজ্ঞানী গওহর রাজা এবং আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের। প্রাক্তন কংগ্রেস কাউন্সিলর ইশরত জাহানের বয়ান অনুযায়ী, দিল্লিতে বিক্ষোভ দীর্ঘদিন জারি রাখার জন্য খুরশিদ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। চার্জশিটে উল্লেখ রয়েছে, নিজেদের বয়ানে ইশরাত জাহান ও খালিদ সইফি জানিয়েছেন, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় ধর্নাস্থলে উপস্থিত আন্দোলনকারীদের উত্তেজিত করার জন্য এই ধরনের উস্কানিমূলক ভাষণ দেওয়া হত। ধর্মের নামে সরকারের বিরুদ্ধে খেপানো হত।
গোপন জবানবন্দিতে ইশরাত ও খালিদ খুরশিদের নাম বলেছে বলে চার্জশিটে উল্লেখ রয়েছে। এই প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, "সবাইকে ধরতে গেলে তো ১৭ হাজার পাতার চার্জশিট হয়ে যাবে। চার্জশিট হল অপরাধ প্রমাণে স্বীকৃত এবং কার্যকর দলিল। যদি ১২ জন লোক এসে উসকানিমূলক ভাষণ দেয় তার মানে এই নয় যে ১২ জনই এক কথা বলে উসকানি দেবে। আমাদের দেশে উস্কানি ও ভিড় তৈরি করা আইনত অপরাধ নয়।" প্রশান্ত ভূষণ জানিয়েছেন, "যে সমস্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ জানিয়েছিল, বেছে বেছে তাঁদেরই বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে দিল্লি পুলিশ। আমি কোনও উস্কানিমূলক ভাষণ দিইনি। আমি সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছি, তাতে যদি উস্কানি দেওয়া হয় তাতে আমার কিছু করার নেই।"
আরও পড়ুন “কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরোবে না তো?” রাফাল প্রসঙ্গে মোদী সরকারকে কটাক্ষ চিদাম্বরমের
বিজ্ঞানী রাজার নাম খুড়িজিতে তাঁর ভাষণের মাধ্যমে "মুসলিমদের উস্কানি" দেওয়ার অভিযোগে উঠে আসে। গোপন জবানবন্দির একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অন্যরা-সহ রাজা সিএএ, এনআরসি এবং বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ভুল ও আপত্তিজনক কথা বলেছিলেন এবং মুসলমানদের উস্কে দিয়েছিলেন। যোগাযোগ করা হলে রাজা বলেন, “আমি আমার বক্তব্যের পাশে দাঁড়িয়েছি এবং সিএএর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছি। আজও, আমি এর বিরোধিতা করছি এবং আমি এর বিরোধিতা চালিয়ে যাব কারণ আমি এটিকে ভারতের সংবিধানের আক্রমণ বলে মনে করি… আমি সর্বদা কোথাও যে কোনও ধরণের সহিংসতার বিরুদ্ধে ছিলাম। সুতরাং অন্য কারও বিরুদ্ধে কাউকে উস্কানি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ”
প্রসঙ্গত, এর আগে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে হিংসার ঘটনায় সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, স্বরাজ ইন্ডিয়ার নেতা যোগেন্দ্র যাদব, অর্থনীতিবিদ জয়তী ঘোষ, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অপূর্বানন্দ এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা রাহুল রায়ের নামও চার্জশিটে রেখেছিল দিল্লি পুলিশ। দিল্লি পুলিশের মুথপাত্র অনিল মিত্তল একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন, "গোপন জবানবন্দির ভিত্তিতে কেউই দোষী প্রমাণিত হয় না। এর স্বপক্ষে প্রমাণ পেলেই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হবে।" এদিকে, দিল্লি হিংসা মামলায় ছাত্রনেতা উমর খালিদকে জেল হেফাজতে পাঠানো হল। বৃহস্পতিবার দিল্লি হাইকোর্ট ইউএপিএ ধারায় অভিযুক্ত উমরকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। তবে পরিজনদের দেখা করার অনুমতি দিয়েছে আদালত।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন