স্যান্ডউইচ কিনলে গান ফ্রি! অভিনব উদ্যোগ শহরের দুই তরুণের
"বিদেশে এমন কাজ অনেক হয়েছে। সরাসরি পথচলতি মানুষের কাছে পৌঁছতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গান করেন, ছবি আঁকেন শিল্পীরা। কিন্তু আমাদের শহরে এমন ছবি চোখে পড়ে নি আগে।"
"বিদেশে এমন কাজ অনেক হয়েছে। সরাসরি পথচলতি মানুষের কাছে পৌঁছতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গান করেন, ছবি আঁকেন শিল্পীরা। কিন্তু আমাদের শহরে এমন ছবি চোখে পড়ে নি আগে।"
দুই তরুণ স্যান্ডউইচ বিক্রি করেন। কিন্তু কেবল স্যান্ডউইচ নয়, সঙ্গে উপরি পাওনা নানা রকমের গান। পোশাকি নাম 'মিউজিক্যাল স্যান্ডউইচ' হলেও আদতে যা হয়ে উঠছে শহর ও শহরতলির উঠতি গাইয়েদের আত্মপ্রতিষ্ঠার মঞ্চ।
Advertisment
দক্ষিণ কলকাতার গোলপার্ক এলাকার ফুটপাথে প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত দেখা মিলবে কলেজ পড়ুয়া নীলাঞ্জন সাহা ও তাঁর বন্ধু রাজিত রায়ের। শ্যামাপ্রসাদ কলেজের কলা বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র নীলাঞ্জন প্রতিদিন বাড়ি থেকে এক বাক্স স্যান্ডউইচ নিয়ে আসেন। উদ্দেশ্য কিন্তু কেবল স্যান্ডউইচ বিক্রি করা নয়। তার পাশাপাশি, পথচলতি মানুষকে গান শোনানো। নীলাঞ্জনের কথায়, ''আমরা প্রতিদিন স্যান্ডউইচ নিয়ে এখানে বসি। সঙ্গে থাকে বিভিন্ন বাজনা। স্যান্ডউইচ খাওয়ানোর পাশাপাশি মানুষজনকে গান শোনাই আমরা।'' তিনি বলেন, ''আমাদের পরিচিত অনেকেই গান গেয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য লড়াই করছেন। আমরা তাঁদেরও ডেকে আনি। স্যান্ডউইচ বিক্রিও যেমন হয়, তেমনই মানুষ নতুন শিল্পীদের কাজের সঙ্গেও পরিচিত হন। তাই আমাদের উদ্যোগের নাম দিয়েছি মিউজিক্যাল স্যান্ডউইচ।''
নীলাঞ্জনেরা তিন ধরনের স্যান্ডউইচ বিক্রি করেন। পট্যাটো স্যান্ডউইচের দাম ১৬ টাকা, এগ স্যান্ডউইচ ২১ টাকা, চিকেন স্যান্ডউইচ ৩৫ টাকা। কিন্তু তাঁদের আসল ইউএসপি গান। বিকেল সাড়ে চারটের সময় শুরু হয় বিক্রিবাটা ও গানবাজনা। চলে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত।
Advertisment
নীলাঞ্জন বলেন, ''কলকাতা এখন অনেকখানি বদলে গিয়েছে। স্ট্রিট মিউজিক নিয়ে নানা রকম কাজ হচ্ছে। অনেকেই বাস্কিং করছেন। রাস্তায় দাঁড়িয়ে গান গেয়ে মানুষের সঙ্গে কমিউনিকেট করছেন। প্রথাগত মাধ্যমগুলির বাইরেও মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার বিভিন্নরকম পথ খুঁজে নিচ্ছেন নতুন শিল্পীরা। কিন্তু স্যান্ডউইচের সঙ্গে গানবাজনার এমন উদ্যোগ এই প্রথম।''
এমন অভিনব উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন অনেকেই। কলকাতার সংস্কৃতির বিবর্তন নিয়ে গবেষণা করছেন শাঁওলি দাশগুপ্ত। তাঁর কথায়, "বিদেশে এমন কাজ অনেক হয়েছে। সরাসরি পথচলতি মানুষের কাছে পৌঁছতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গান করেন, ছবি আঁকেন শিল্পীরা। কিন্তু আমাদের শহরে এমন ছবি চোখে পড়ে নি আগে।"
গোলপার্কের একটি লাইব্রেরিতে প্রতিদিন পড়াশোনা করতে যান সরকারি কলেজে অধ্যাপিকা রম্যাণি ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, "এই ছেলেগুলি এলাকার পরিবেশটা অনেকখানি বদলে দিতে পেরেছে। খুব ভাল চেষ্টা। চাইব, ওরা সফল হোক।"
নীলাঞ্জনের আক্ষেপ, সাধুবাদ যতখানি মেলে, স্যান্ডউইচ তত বিক্রি হয় না। অনেকেই ভিড় করে গান শোনেন, তারপর চলে যান। তাঁর কথায়, "আসলে এখনও হয়তো আমরা ঠিক কী করছি, সেটা সবাই বুঝে উঠতে পারছেন না। তাই সময় লাগছে। কিন্তু আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাব। আজ না হোক কাল, মানুষের আগ্রহ বাড়বেই।"