করমণ্ডল দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায় সরকার কোনও খামতি রাখবে না। শনিবার দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর এমনটাই জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, 'এটি একটি বেদনাদায়ক ঘটনা। আমি আহতদের সঙ্গে কথা বলেছি। আহতদের চিকিৎসায় সরকার কোনও খামতি রাখবে না। এটা একটি অত্যন্ত গুরুতর ঘটনা। প্রতিটি কোণ থেকে দুর্ঘটনার তদন্তের জন্য নির্দেশ জারি করা হয়েছে। যারা দোষী সাব্যস্ত হবে তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। রেলপথ পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে।'
দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ইতিমধ্যে বেড়ে হয়েছে ২৮৮। আহত ৭৪৭ জনেরও বেশি। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে, মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তারই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শনিবার ওড়িশার বালাসোর জেলার বাহানাগায় দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। দুর্ঘটনাস্থলে তাঁর সঙ্গে ছিলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণো ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। তাঁদের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রী উদ্ধারকাজের যাবতীয় খতিয়ান নেন। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বালাসোর হাসপাতালে গিয়ে আহতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।
এরপরই আহতদের চিকিৎসা নিয়ে মুখ খোলেন। নয়াদিল্লিতেও এই ট্রেন দুর্ঘটনা নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণো। দুর্ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ারও। তিনিও এই দুর্ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। শরদ পাওয়ার বলেছেন, 'এটি একটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। প্রত্যেকের দাবি দুর্ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত করা হোক।'
এর মধ্যেই রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণোর পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, 'মোদী সরকার নানা প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা খরচ করলেও রেলের নিরাপত্তার কথা ভাবছে না। এই সব মৃত্যুর দায় কেন্দ্রীয় সরকার অস্বীকার করতে পারে না। নৈতিকতার দায় নিয়ে রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত।' প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও তীব্র সমালোচনা করেছেন অভিষেক।
ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলও রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন। ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুরে কংগ্রেসের সদর দফতর রাজবীন ভবনে বাঘেল বলেছেন, 'দুর্ঘটনায় গোটা জাতি শোকাহত। ভারতীয় জনতা পার্টি নৈতিকতা ও শালীনতার কথা বলে। তাই তাঁর (রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব) অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত। এটি অবশ্যই তাঁর দায়িত্ব এবং আমরা দেখব যে তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করেন কি না।' বাঘেল ইতিমধ্যেই নিহত ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। গোটা পরিস্থিতি নিয়ে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের সঙ্গে কথা বলেছেন। পাশাপাশি, প্রয়োজনে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।
মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতা দিগ্বিজয় সিং-ও রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন। ছাতারপুরে সাংবাদিক বৈঠকে লালবাহাদুর শাস্ত্রীর উদাহরণ তুলে ধরে দিগ্বিজয় বলেন, 'লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর উদাহরণ অনুসরণ করুন। রেলমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করুন। রেলমন্ত্রী, ওড়িশা ক্যাডারের প্রাক্তন আইএএস অফিসার। তিনি সর্বদা দাবি করেছেন যে সুরক্ষা ব্যবস্থাটি নির্ভুল। কোনও দুর্ঘটনাই ঘটতে পারে না। এমন একটি ট্রেন দুর্ঘটনার পর ১৯৫৬ সালে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী পদত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু, আমরা মোদী মন্ত্রিসভার (বর্তমান রেলমন্ত্রী) মন্ত্রীর কাছ থেকে এমন পদক্ষেপ আশা করতে পারি না। একটু লজ্জা থাকলে, মন্ত্রীর (বৈষ্ণো) পদত্যাগ করা উচিত।'