ভোটে 'কারচুপি' দাবি, বিক্ষোভের মধ্যে পাকিস্তানে একাধিক বুথে পুনরায় নির্বাচনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি ২৬টি বুথে ফের হবে ভোটগ্রহণ।
ইমরান খানের পিটিআই সহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সমর্থকরা ৪০ ঘন্টা পার হয়ে গেলেও ভোটের ফলাফল প্রকাশ না হওয়ায় 'কারচুপির' অভিযোগে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছে। সাধারণ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে ইমরান খানের পাকিস্তান-তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এবং অন্যান্য দলগুলির বিক্ষোভের মধ্যে, পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে পুনরায় ভোটগ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। ১৫ ফেব্রুয়ারি পুনঃভোট হওয়ার কথা। প্রায় ১০টি আসনে ভোট গণনা এখনও চলছে এবং এখনও পর্যন্ত কমিশন ফলাফলের ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছুই জানায় নি।
পিটিআই চেয়ারম্যান গোহর আলী খান, যিনি ইমরান খানের আইনজীবী এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে পাকিস্তানের "সমস্ত প্রতিষ্ঠানের" জনগণের মতামতকে সম্মান করা উচিত। তিনি দাবি করেছেন যে তার দলকে রাষ্ট্রপতি আরিফ আলভি সরকার গঠনের জন্য আমন্ত্রণ জানাবেন এবং আরও বলেছেন যে কারাগারে থাকা ইমরান খান দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, শনিবার রাতের মধ্যে নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ না হলে পিটিআই রবিবার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করবে।
পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ তথ্য (ইসিপি) অনুসারে, পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এখনও পর্যন্ত ১০০টির বেশি আসন জিতেছে, শরীফের পিএমএল-এন, ৭২ টি আসনে চেয়েও এগিয়ে। নিহত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ৫৪ টি আসন জিতেছে। অন্যান্য দল পেয়েছে ২৭টি আসন।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টারও বেশি সময় কেটে গেলেও ২৬৬ আসনের ফলাফল এখনও ঘোষণা করা হয়নি। প্রযুক্তিগত ত্রুটি, ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ এবং বিক্ষিপ্ত সন্ত্রাসবাদী হামলার কারণে ভোটগণনা বিলম্বিত হচ্ছে বলে কমিশন সূত্রে খবর।
পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) সুপ্রিমো এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফও নির্বাচনে নিজের জয় দাবি করেছেন এবং বলেছেন যে তার দল "একক-সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে"। তবে, তিনি স্বীকার করেছেন মোট কতগুলি আসনে দল জিতেছে সেই বিষয়ে নির্দিষ্ট কোন পরিসংখ্যান তার কাছে নেই। পাশাপাশি জোট সরকার গঠনের জন্য মিত্রদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি। অপরদিকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দাবি করেছেন তার দলই সর্বাধিক আসনে জয়লাভ করেছে। তিনিই হতে চলেছেন দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী।
ইমরান খান এবং তার পিটিআইয়ের জন্য, নির্বাচনী ফলাফল যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ কারণ নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কমিশন কর্তৃক 'ব্যাট' নির্বাচনী প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে দলকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এ কারণেই ইমরান খানের সমর্থকরা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। শরীফকে কটাক্ষ করে ইমরান খান বলেছেন "লন্ডন পরিকল্পনা" ব্যর্থ হয়েছে।
এদিকে, পিটিআই, পিপিপি এবং পিএমএল-এন তাদের নির্বাচনী এলাকায় কারচুপির অভিযোগে বিভিন্ন আদালতে পিটিশন দাখিল করেছে। দলগুলি দাবি করেছে যে প্রার্থীদের আগে জয়ী বলে ঘোষণা করা হয়েছিল পরে তাদের 'পরাজিত' হিসাবে ঘোষণা করা হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং ইইউ পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে কারচুপি ও জালিয়াতির অভিযোগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিপ্তে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্তের দাবিও জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য সরকার গঠনের জন্য, কোন একটি দলকে মোট ২৬৫ টির মধ্যে ১৩৩ টি আসন জিততে হবে। একজন প্রার্থীর মৃত্যুতে একটি আসনে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে মোট ৩৩৬ টি আসনের মধ্যে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য ১৬৯ টি আসন প্রয়োজন, যার মধ্যে মহিলা এবং সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত আসন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।