মানুষের জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত যদি কিছু থাকে, তবে নিজের বাড়ির থেকে কাছের বোধহয় আর কিছুই নেই। সারাদিনের বিশ্রাম থেকে একাকীত্ব আর এখন মহামারিতে বেশিরভাগ সময়ই কাটছে বাড়িতে। প্রতিদিনের ক্লান্তি সরিয়ে একমুঠো খুশির আমেজ মানে বাড়ি! কিন্তু আপনি কি জানেন, আপনার বাড়ির ধুলোয় এবং হাওয়াতে জমে থাকা ছত্রাক বা ফাংগাস আপনার শারীরিক ক্ষতি করতে পারে?
সারাবছর মানুষ বর্ষার অপেক্ষায় থাকে! গরমের দাবদাহ থেকে এক পশলা শান্তির আরাম সকলেরই প্রাপ্য। তবে এই বর্ষায় কিন্তু বাড়ির অভ্যন্তরীণ ফাংগাস বেশ মাত্রায় গজায়! যা কেবল বাড়ির নয়, মানবদেহে নানান সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। ছত্রাক জানালা, দরজা, কাপড়, জুতো বা এমনকি পোষা প্রাণীর মাধ্যমে ঘরে প্রবেশ করতে পারে। ধুলোর ন্যায় এবং একটি বিকট গন্ধযুক্ত হওয়াতে সহজেই দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম! অনেকেই এর প্রভাবকে উপেক্ষা করেন , তারপরও এটি ক্ষতিকারক!
আসলে ঘরের ছত্রাক বা হাউস ফাংগাস কী?
শ্রী বালাজি অ্যাকশন মেডিকেল ইনস্টিটিউটের সিনিয়র পরামর্শক ডা. মনীষা অরোরা বলেন, সাধারণত স্যাঁতস্যাঁতে বাড়িঘর, বাথরুম, রান্নাঘর, এসি-র চারপাশে এবং ঘরের কোণায় এই ফাংগাসের প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়! এগুলি ছাঁচের মতো দেখতে এবং ক্ষতিকর পদার্থের সৃষ্টি করতে পারে যার থেকে বাড়িতে বসবাসকারী মানুষদের বেশ সমস্যায় পড়তে হয়। ডা. মনোজ শর্মা ( সিনিয়র কনসালটেন্ট ইন্টার্নাল মেডিসিন, ফর্টিস হাসপাতাল ) বলেন, বাড়ির যে জায়গাতেই আদ্রতা এবং স্যাঁতস্যাঁতে ভাব একসঙ্গে বিরাজ করে সেখানেই এটি জন্ম নেয়।
কী কী ধরনের হাউস ফাংগাস হয়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যাসপারগিলাস, অলটারনারিয়া, অ্যাক্রেমোনিয়াম, অরেওবাসিডিয়াম, চ্যাটোমিয়াম, ক্ল্যাডোস্পোরিয়াম, ফুসারিয়াম, মিউকোর, পেনিসিলিয়াম, স্ট্যাচিবোট্রিজ, ট্রাইকোডার্মা, উলোক্ল্যাডিয়াম ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের ছত্রাক যা আপনার বাড়িতে বিকাশ করতে পারে সবগুলিই ক্ষতিকারক! অ্যাক্রেমোনিয়াম সবথেকে সাধারণ ফাংগাস যেগুলি বেশিমাত্রায় লক্ষ্য করা যায়! তবে মানবদেহে ক্যান্ডিডা, অ্যাসপারগিলাস এবং মিউকর এগুলিও যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে পারে।
কী কী ধরনের শারীরিক ক্ষতি ঘটায়?
• এর সংস্পর্শে এলে হাঁচি কাশি এবং সর্দিও হতে পারে। এছাড়াও হাঁপানি এবং শ্বাসযন্ত্রের নানান সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে। অনেকেই গলা ব্যথায় ভোগেন এই ছত্রাকের প্রভাবে।
• এই ছত্রাক অঙ্গের উপর নির্ভর করে এবং এর স্পোরের প্রভাব স্বাস্থ্যের অবনতি, চুলকানি, খুশকি, অস্বস্তি, লাল ভাব সহ অনেক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া এবং শ্বাসকষ্ট এর থেকে খুব সাধারণ ব্যাপার । ইমিউনো কম্প্রোমাইজড রোগীদের এটি বেশি মাত্রায় প্রভাবিত করতে পারে এবং আরও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
চিকিত্সকদের মতে, নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে, বাড়ির ছত্রাক মারাত্মক প্রমাণিত হতে পারে। গৃহস্থালির ছত্রাকের দীর্ঘায়িত সংস্পর্শ সম্ভাব্যভাবে পালমোনারি ফাইব্রোসিস বা ফুসফুসের ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি ক্যানসারও হতে পারে।
আরও পড়ুন ইউরিক অ্যাসিড কি কমিয়ে দিচ্ছে শরীরের মেটাবলিজম?
প্রতিরোধ :
• স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখুন, বাড়িঘর ঘনঘন পরিষ্কার করুন এবং নিজেরাও পরিচ্ছন্ন থাকুন।
• ব্যাকটেরিয়া সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে এমনকি আমাদের বাড়ির সীমিত এলাকায়ও বিকশিত হতে পারে। গৃহস্থালিতে ছত্রাকের বিকাশ রোধ করতে নিরাপদ এবং কার্যকর রাসায়নিক সমাধান ব্যবহার করুন।
• পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যের আলো সারা বাড়িতে পৌঁছাচ্ছে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
• রক্তে শর্করার মাত্রা, এমনকি অনাক্রম্যতা এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং ফিটনেস বজায় রাখুন। যদি কেউ ইমিউনোসপ্রেসেন্টে থাকে বা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের মতো অসুস্থতায় ভুগছেন, তাদের অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত অন্যথায় অবনতি হতে পারে।
• বাড়িঘর পরিষ্কার করার সময় হাতে গ্লাভস এবং মাস্ক পরতে ভুলবেন না! খেয়াল রাখবেন ধুলো যেন কোনও ভাবেই নাকের কাছে না যায়!
বাড়িঘর স্যাঁতস্যাঁতে হলে সেই প্রাসঙ্গিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলুন। অনেক সময় বাড়ির রং কিছুটা হলেও মুক্তি দিতে পারে এর থেকে! তাই শরীরের সঙ্গে কোনও ভাবেই আপোস করবেন না।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন