Advertisment

নববর্ষে জিভে জল আনা খাবার, সেদিনেও বাঙালিয়ানায় আধুনিকতা ছিল জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে

আইরিশ স্ট্যু থেকে নানা ধরনের স্যালাড - আচারের সমারোহ, কী ছিল না!

author-image
Anurupa Chakraborty
New Update
NULL

জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি

নববর্ষ মানেই খাওয়াদাওয়া, আর প্রসঙ্গে যখন খাবার তখন ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলের ছবি কীভাবে বাদ যায়? একসময় জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি ছিল নতুন সব রেসিপির আখড়া, কবিগুরু নিজে যেমন খেতে ভালবাসতেন তেমন রেসিপি উদ্ভাবনে ততটাই পারদর্শী ছিলেন। বাংলার সেই যুগে খাবার থেকে শাড়ি পরার ধরন, ঠাকুরবাড়ির প্রতিটি বিষয়ই ছিল অনন্য।

Advertisment

ঠাকুরবাড়িতে রান্না নিয়ে গবেষণা করতে সবথেকে বেশি যিনি ভালবাসতেন তিনি প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবী। বলা যায়, রান্না নিয়ে একরকম আলোড়ন সৃষ্টি করে ফেলেছিলেন তিনি, যা অসাধারণ দক্ষতায় রান্না করতেন, অতুলনীয়! তবে ঠাকুরবাড়ির অন্দরে রন্ধনশৈলির ভিন্নতা ছিল দারুণ। পরবর্তীতে পূর্ণিমা দেবীর বইতেও তার উল্লেখ রয়েছে। অতি সাধারণ খাবার কিন্তু, অল্প একটু স্বাদের তারতম্য - সেই রান্নাই মন কাড়ত সকলের।

নিরামিষ-আমিষ মিলিয়ে ঠাকুরবাড়ির অন্দরে নানা রকম পদ রান্না হত। শুধুই যে বাঙালি রান্না এমন নয়, তারসঙ্গে আইরিশ থেকে কন্টিনেন্টাল, মোগলাই সবকিছুই ছিল। নিরামিষ পদে ছিল হরেক রকম আয়োজন। প্রজ্ঞাসুন্দরি দেবী এবং ইন্দিরা দেবীর রান্নার ধাঁচ ছিল কিছুটা আলাদা - অল্প মশলায় অনেক রান্নাই সহজে করে ফেলতেন ইন্দিরা দেবী। তবে নববর্ষ উপলক্ষেই, বাড়িতে লাউ দিয়ে ডাল, আম ইচড়ের তরকারি, দই দিয়ে আলুর দম, মোচার চপ, চিড়ের খিচুড়ি ছিল বাঁধাধরা।

publive-image

মাঝে মধ্যেই কবির আসর বসত, ঠাকুরবাড়িতে। বিহারীলাল চক্রবর্তী নাকি কবিসভায় সামিলই হতেন কাদম্বরী দেবীর রান্না খাবেন বলে। চপ কাটলেট, খাসির মাংসের নানান পদ আর সঙ্গেই লোভনীয় নানান খাবার। নিরামিষ পদে শুক্ত অথবা শুক্তোনি ছিল বেশ সুস্বাদু! তিন ইঞ্চির ছোট লুচি ছিল ঠাকুরবাড়ির ঐতিহ্য। তবে রবিঠাকুরের নিরামিষ খাবার দাবার খুব একটা পছন্দের ছিল না। তিনি ভালবাসতেন, মাছ মাংসের নানা পদ। কাবাব খুব পছন্দ করতেন, ইলিশ, চিতল, চিংড়ির ঝোল, তপসের ঘিতপসি, ভেটকির মইলু ভীষণ ভালবাসতেন।

রানি চন্দ তাঁর বইতে লিখেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ ছোট থেকেই রেসিপি নিয়ে গবেষণা করতেন। আরুম জিলিপি ( Arum Jalebi ) কিংবা ছানার জিলিপি তাঁর অন্যতম প্রিয় মিষ্টি ছিল। এমনকি এই জিলিপির স্বাদে আসল জিলিপি কেমন খেতে হয় সেটিও ভুলে গেছিলেন। মিষ্টির মধ্যেই আরেকটি ছিল ভিন্ন ধরনের, কবি সম্বর্ধনা - নাম অন্য ধাঁচের হলেও এটি খেতে বেশ সুস্বাদু! এছাড়াও আইরিশ স্টু, মুরগির ঝালফিরেজি, মাংসের প্যাটিস ছিল ঠাকুরবাড়ির অন্যতম পছন্দ।

publive-image

অন্যদিকে একসময় নববর্ষ মানেই ছিল, মৃণালিনী দেবীর স্পেশ্যাল রেসিপি ম্যাঙ্গো রাইস - রবিঠাকুরের পছন্দের তালিকায় ছিল, এলোঝেলো, মুগ শ্যামলী, রুটির মালপোয়া - আচার থাকত ভিন্নস্বাদের। গরমের দিনে ঠাকুরবাড়িতে শুকোতে দেওয়া হত আমের আচার। লঙ্কার পেটে পোড়া, জলপাইয়ের আচার ছিল মাস্ট, ঠাকুরবাড়ির সকলেই খাদ্যরসিক। নববর্ষে নিত্যনতুন চমক থাকত প্রতিবার।

food noboborsho
Advertisment