করোনা সরাসরি জনগণের মানসিক স্বাস্থ্যকে সংকটময় করে তুলেছে। এবার সামনে এসেছে এক ভয়ঙ্কর তথ্য। মানসিক রোগীদের উপর একটি সমীক্ষা অনুসারে, জানা গিয়েছে ভারতীয়দের মধ্যে বাড়ছে মানসিক সংকট। আর মানসিক সমস্যায় ভোগা রোগীদের মধ্যে ৭ শতাংশই স্কিৎজোফ্রেনিয়াতে আক্রান্ত।
আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশের বয়স ৪০ বছরের কম। আগ্রা মেন্টাল অ্যাসাইলাম, যা এখন ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড হসপিটাল নামে পরিচিত এটি ভারতের প্রাচীনতম এবং সর্ববৃহৎ মেন্টাল হাসপাতালগুলির মধ্যে অন্যতম।
চিকিৎসার জন্য ইনস্টিটিউটে আগত মানসিক রোগীদের উপর একটি সমীক্ষা অনুসারে জানা গিয়েছে যত সংখ্যক মানুষ ওপিডিতে মানসিক সমস্যার চিকিৎসা করাতে আসেন তাদের মধ্যে ৭ শতাংশ স্কিৎজোফ্রেনিয়াতে আক্রান্ত। এবিষয়ে হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডাঃ দীনেশ রাঠোর বলেছেন, রোগী যখন অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে যেমন পরিবারেই কারুর থেকেই চরম বিপদের আশঙ্কা, পরিবারের কেউ বা পরিচিত জনরা তার খাবারে বিষ মিশিয়ে দিচ্ছে– এমন সন্দেহ করে থাকেন এই রোগীরা।
এ ছাড়া আরও অমূলক সন্দেহ করে থাকেন তারা। এ ধরনের রোগীদের নিয়ে সাধারণত পরিবারের লোকেরা খুব সমস্যায় পড়ে যান। রোগীর অদ্ভুত আচরণগুলো মানিয়ে নিতে বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এই সংখ্যা প্রায় ৭ শতাংশ যেটা উদ্বেগের। মানসিক ব্যাধিগুলির মধ্যে স্কিৎজোফ্রেনিয়া রোগীর সংখ্যা কম থাকা সত্ত্বেও, জনগণকে এই ব্যাধি সম্পর্কে সচেতন করা অপরিহার্য, কারণ এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে।
ডাঃ রাঠোর বলেন, স্কিৎজোফ্রেনিক রোগীরা তাদের নিজস্ব কাল্পনিক জগতে বাস করেন এবং অদ্ভুতভাবে কথা বলেন, নানান বিচিত্র আচরণ করেন। মনে করেন তারা খুব শক্তিশালী, ধনী বা বিখ্যাত ব্যক্তি। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, ওষুধের মাধ্যমে ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে আনতে রোগীদের অবিলম্বে চিকিৎসা সহায়তা প্রয়োজন।
প্রখ্যাত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ কে সি গুরনানি বলেন, এই ধরণের রোগীকে হাসপাতালে রেখে নির্দিষ্ট পরিচর্যার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা যায়। তবে রোগটিকে গোড়ার দিকে ধরতে হবে দেরি হলেই বিপদ। এ ধরনের রোগীরা কতগুলো অবাস্তব দৃশ্য দেখার দাবি করেন। অবাস্তব স্পর্শ অনুভূতির কথা বলেন। তার চামড়ার ভেতরে পোকা হাঁটহাঁটি করছে। কিছু রোগীকে বলতে শোনা যায়, পেটে ও মাথায় পোকা কিলবিল করছে। কেউ কেউ আবার বলেন, হাত কাটলেও রক্ত পড়বে না ইত্যাদি।
এই রোগের মুল লক্ষণ একা একা কথা বলা, চুপচাপ থাকা, কারও কথার জবাব না দেওয়া, কোনও কিছু জিজ্ঞাসা করলে উত্তর না দেওয়া, কানে অলিক কথা শোনা, অসংলগ্ন কথা বলা, অকারণ সন্দেহ, অস্বাভাবিক নানান আচরণ। ডাঃ গুরনানি বলেন এই ধরণের সমস্যা দেখা দিলেই রোগীকে অবিলম্বে ভাল কোন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন।