একগুঁয়েমি সরিয়ে রেখে বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে সকলকে এক হয়ে লড়াই করার আহ্বান জানালেন তৃণমূল সুপ্রিমো। শুক্রবার সনিয়া গান্ধীর ডাকে ১৯টি বিরোধী দলের প্রধানদের বৈঠক হয়। সেখানেই বক্তব্য রাখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধী জোট নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন তিনি। জানান, ইগো ও ব্যক্তিগত স্বার্থকে দূরে সরিয়ে রেখে সকলকে জোটবদ্ধ হয়ে গেরুয়া শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে হবে। তাঁর বার্তা, কংগ্রেসের সঙ্গে যাঁদের যোগাযোগ নেই তাঁদেরও বিরোধী জোটে শামিল হওয়ার জন্য। আমন্ত্রনজানাতে হবে।
এ দিনের বৈঠকে পরিকল্পিতভাবে বিরোধী জোট পোক্ত করার ডাক দিয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে কার্যত সেই পরিকল্পনা কীভাবে বাস্তবের মুখ দেখবে তার পথ বাতলেছেন। যা জাতীয়স্তরে বিরোধী রাজনীতিতে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
লক্ষ্য ২০২৪। পদ্ম শিবিরকে উৎখাতে মোদী বিরোধী জোট গঠন প্রয়োজন বলে মানছেন সকল বিরোধী দলই। কিন্তু, জোটে কংগ্রেসের অবস্থান একাধিক বিজেপি বিরোধী দলের কাছেই সংশয়ের। আবার বিরোধী জোট দেশের প্রাচীনতম এই রাজনৈতিক দলকে ছাড়া কার্যত অসম্ভব। বাস্তবতা উপলব্ধী করেছেন পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই বিরোধী জোট পোক্ত করতে এ দিন নিজেই দৌত্যের বার্তা স্পষ্ট দিয়েছেন তিনি। মোদী সরকারকে ফেলতে কংগ্রেসের সঙ্গেই বিরোধী জোটে যে অন্যান্য বিজেপি বিরোধী দলও সমান গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।
আরও পড়ুন- নজরে ২০২৪, পরিকল্পিত পথে পোক্ত বিরোধী জোটের বার্তা সনিয়ার
উল্লেখ্য, এ দিনের বৈঠকে আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ছিল না সমাজবাদী পার্টির কোনও প্রতিনিধি। এই দুই দলের সঙ্গেই কংগ্রেসের সম্পর্ক ভালো নয়। কিন্তু, মমতার সঙ্গে কেজরিওয়াল বা অখিলেশ যাদবের সুসম্পর্ক। বিরোধী জোটের বৈঠকে এঁরা শামিল না হওয়ায় ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যার জেরেই তৃণমূল নেত্রীর ইগো ছেড়ে সবাইকে এক জোট হওয়ার পরামর্শ বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন- ‘আফগানিস্তানে চলে যাও’, সাংবাদিকের প্রশ্নে চটে লাল বিজেপি নেতার মন্তব্যে বিতর্ক
২১ জুলাই বিরোধী ফ্রন্ট গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর গত মাসের শেষে দিল্লি সফরে গিয়েও বিরোধী জোটের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন তিনি। সনিয়া-রাহল গান্ধী সহ বিভিন্ন শিবিরের এক ঝাঁক কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে কথা হয় তাঁর। সাক্ষাত করেন শরদ পাওয়ার, কানিমোঝি, কেজরিওয়ালদের সঙ্গেও। প্রশ্ন ওঠে বিরোধী শিবিরের মুখ কে হবেন? এপ্রসঙ্গে রাজধানীতে মমতা স্পষ্ট করেন জানিয়েছিলেন যে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, আপাতত বিরোধী জোট গঠনের ক্ষেত্রে তিনি কাঠবিড়ালির ভূমিকা পালন করবেন। যদিও তৃণমূলের অন্দর থেকে দলনেত্রীকেই প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তুলে ধরার প্রয়াস হয়েছে। সোশাল মিডিয়ায় প্রচারও চলেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, একদিকে মোদী বিরোধীতায় মমতার সবাইকে এক করার প্রয়াস, অর্থাৎ তাঁর গ্রহণযোগ্যতা। অন্যদিকে বিজেপি সরকার ফেলতে কার্যত তাঁর দেখানো পথেই যে অসাধ্য সাধন সম্ভব- বিরোধী দলগুলোর নেতাদের বৈঠকে এ দিন সেই বার্তাই তুলে ধরতে চাইলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
এছাড়াও, এদিন বিরোধীদের বৈঠকে কৃষক আন্দোলনের প্রসঙ্গ, মোদী সরকারের বিরুদ্ধে একনায়কতন্ত্রের অভিযোগ ও বঞ্চনার অভিযোগ, পেগাসাস ইস্যু, জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গ তুলে সোচ্চার ছিলেন তৃণমূল নেত্রী।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন