মঙ্গলবার কর্ণাটক বিধানসভায় আস্থাভোটে পরাজিত হলো মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস-জেডি (ইউ) সরকার। এদিন সন্ধ্যায় বিধানসভার অধ্যক্ষ কে আর রমেশ ঘোষণা করেন, "আস্থাভোটে অসফল হয়েছেন এইচ ডি কুমারস্বামী, সরকারের পক্ষে ভোট পড়েছে ৯৯ টি, এবং বিপক্ষে ১০৫ টি।" উল্লেখ্য, ১৫ জন বিধায়কের ইস্তফার ফলে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে সরকার, যার ফলে আস্থাভোটের প্রয়োজন হয়। বিস্তর দড়ি টানাটানির পর আস্থাভোটের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল আজ সন্ধ্যা ছটায়। খবরে প্রকাশ, পরাজয়ের পরে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার আবেদন জানিয়েছেন কুমারস্বামী।
গত বেশ কয়েক সপ্তাহ যাবত যত দিন গড়িয়েছে, ততই নাটকীয় মোড় নিয়েছে দক্ষিণের এই রাজ্যের রাজনীতি। সোমবারও কর্ণাটক বিধানসভায় আস্থা ভোট করাতে পারেন নি অধ্যক্ষ। যার ফলেই আবারও আস্থা ভোটের ডেডলাইন বেঁধে দেওয়া হয়েছিল আজ সন্ধে ছটার মধ্যে। অন্যদিকে কংগ্রেস এবং বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে হিংসার জেরে রাজধানী বেঙ্গালুরুতে মঙ্গল-বুধবার ৪৮ ঘণ্টার জন্য জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা।
আরও পড়ুন: রাজ্যপালের নির্দেশ খারিজ, কর্নাটকে আস্থা ভোট হতে পারে সোমবার
মঙ্গলবার অর্থাৎ আজ সকালে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, পদত্যাগপত্র সঙ্গেই এনেছেন তিনি। আবার বিকেলে আস্থা ভোট নিয়ে ‘অনিচ্ছাকৃত দেরি’র জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এইচডি কুমারাস্বামী। গত চারদিন ধরে আস্থা ভোট নিয়ে বিধানসভায় বিতর্ক পর্বে তাঁর পদ ছেড়ে না দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল বলে নিজেই জানান মুখ্যমন্ত্রী। এর প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, "আমি আমার রাজ্যের মানুষ এবং অধ্যক্ষের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আস্থা ভোটের ফলাফল কী হবে জানতাম না, আজ সঙ্গে পদত্যাগপত্র নিয়েই এসেছিলাম।"
BS Yeddyurappa & other Karnataka BJP MLAs show victory sign in the Assembly, after HD Kumaraswamy led Congress-JD(S) coalition government loses trust vote. pic.twitter.com/hmkGHL151z
— ANI (@ANI) July 23, 2019
এর আগে সোমবারই আস্থাভোট করা হবে বলে জানিয়েছিলেন অধ্যক্ষ কে আর রমেশ। কিন্তু তা সত্ত্বেও নানা টালবাহানায় সোমবারও আস্থাভোট করা যায়নি কর্ণাটক বিধানসভায়। এদিকে, অবিলম্বে আস্থাভোটের দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন দুই নির্দল বিধায়ক। সেই মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল আজ, কিন্তু আজ অথবা আগামীকাল আস্থাভোট হতে পারে, সেই আভাস পেয়ে শুনানি স্থগিত রাখা হয় বুধবার পর্যন্ত।
সোমবার বিধানসভার অধ্যক্ষের কাছে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী অনুরোধ করেন, ১৫ জন বিক্ষুব্ধ বিধায়ককে হুইপ করার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট কী নির্দেশ দেয়, তা জানার পরই আস্থাভোট করা হোক। কিন্তু অধ্যক্ষ বলেন, "আমাকে প্রতিশ্রুতি ভাঙতে বলবেন না…তা করলে আমার বা হাউজের সম্মান থাকবে না।" অন্যদিকে, কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী ইস্তফা দিয়েছেন, এ খবর ছড়ায় সোমবার। পরে ওই ইস্তফাপত্রে কুমারস্বামীর সই জাল করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।
আরও পড়ুন: বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের আস্থা ভোটে বাধ্য করা যাবে না: সুপ্রিম কোর্ট
এর আগে আস্থাভোট করার জন্য বেশ কয়েকবার ডেডলাইন বেঁধে দেন খোদ রাজ্যপাল বাজুভাই বালা। কিন্তু তা সত্ত্বেও আস্থাভোট ঘিরে জট কাটেনি। উল্টে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে আসরে নামে কংগ্রেস-জেডিএস সরকার। সরকার টিকিয়ে রাখতে মরিয়া এইচ ডি কুমারস্বামী আলোচনার আশ্বাস দিয়ে বিধায়কদের খোলা চিঠি লেখেন। পাশাপাশি বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের ফেরার আর্জি জানিয়ে তিনি বলেন, "আপনারা বিধানসভায় এসে বলুন, কীভাবে বিজেপি ষড়যন্ত্র করে গণতন্ত্র ধ্বংস করতে চাইছে।" ওই চিঠিতে অবশ্য কুমারস্বামী স্পষ্ট ভাষায় জানান যে তিনি "চেয়ার আঁকড়ে" থাকতে চান না।
রাজ্যের সম্ভাব্য পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা বি এস ইয়েদুরাপ্পা এই ফলাফলকে গণতন্ত্রের জয় বলে চিহ্নিত করেছেন। "মানুষ কুমারস্বামী সরকারের ওপর তিতিবিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন। আমি সকল কর্ণাটকবাসীকে আশ্বাস দিতে চাই যে উন্নয়নের এক নতুন যুগ এবার শুরু হবে," ইয়েদুরাপ্পাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএনআই। "আমরা কৃষকদের জানাতে চাই, তাঁদের আমরা আগামী দিনে আরও বেশি গুরুত্ব দেব।"