Manoj Tiwary pointed out Gautam Gambhir's shortcomings as a coach: ভারতের বর্তমান কোচ গৌতম গম্ভীরকে কেন তিনি 'ভণ্ড' বলেছেন? কেনই বা তিনি কোচ গম্ভীরের ত্রুটিগুলো তুলে ধরেছেন? কেনই বা গৌতম গম্ভীর 'পিআর'-এর জোরে চলেন বলে তিনি অভিযোগ করেছেন? এবার তা সামনে আনলেন প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেটার মনোজ তিওয়ারি। তিনি বলেন, 'গৌতম গম্ভীর আমার পরিবারকে পর্যন্ত গালি দিয়েছে।'
গৌতম গম্ভীর ও মনোজ তিওয়ারি দীর্ঘদিন একসঙ্গে খেলেছেন। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) কলকাতা নাইট রাইডার্স (কেকেআর)-এর হয়ে দুই খেলোয়াড়ই খেলেছেন। কেকেআরের ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি করেছেন। ২০১৫ সালে রঞ্জি ট্রফি ম্যাচের সময় গম্ভীর আর তিওয়ারির মধ্যে ঝগড়া হয়। তার আগে পর্যন্ত এই জুটিকে নিয়ে কোনও কথা ওঠেনি। দু'জনের কেউই কারও বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি। সেই গম্ভীর বর্তমানে ভারতের প্রধান কোচ। তিনি সদ্যসমাপ্ত বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি (বিজিটি) সিরিজে ভারতীয় দলের খারাপ পারফরম্যান্সের পর থেকেই বেশ চাপে আছেন। প্রচণ্ড সমালোচিত হচ্ছেন।
টিম ইন্ডিয়া সদ্যসমাপ্ত বিজিটি সিরিজে ১-৩ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে। তার আগে নিউজিল্যান্ডের কাছে ০-৩ ব্যবধানে ঘরের মাঠেই হোয়াইটওয়াশ হয়েছে গম্ভীরের ভারত। সব মিলিয়ে ৮ টেস্টের ৬টিতেই হেরেছে। যার জেরে বিশ্ব চেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (ডব্লিউটিসি) থেকেও ছিটকে গিয়েছে টিম ইন্ডিয়া। এই পরিস্থিতিতে গম্ভীরের বিরুদ্ধে নিশানা করেছেন মনোজ তিওয়ারি। বাংলার ক্রিকেটার ভারতের হয়ে ১২টি ওডিআই এবং ৩টি টি২০ খেলেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, 'ফলাফল ভালো হলেই গম্ভীর যাবতীয় কৃতিত্ব নিয়েছেন। ওঁর থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।'
গম্ভীরের আমলে ভারত এখনও পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার কাছে ওডিআই সিরিজে হেরেছে। ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। আর, ১০ বছর (এক দশক) পর বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি সিরিজে হেরেছে। প্রাক্তন ভারতীয় ওপেনার কোচ হিসেবে টি২০ ফরম্যাটে অবশ্য সাফল্য পেয়েছেন। তবে, ওয়ানডে এবং টেস্টে কাঙ্ক্ষিত ফল পাননি।
এই প্রসঙ্গে মনোজ বলেছেন, 'ফলাফলটা দেখুন। মাত্র অল্প সময়ে তিনটি সিরিজ হেরেছে। বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিতে হেরেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরেছে। এটি একটি বিরাট ক্ষতি। কারণ, এরকম অতীতে কখনও ঘটেনি। এমনিতে জয়-পরাজয় খেলারই অংশ। কিন্তু, ফলাফলটাই সব। এই পরাজয়ের কারণগুলো খুঁজতে হবে। বুঝতে হবে কারণগুলো। নিশ্চিত করতে হবে যাতে এসব জিনিস আর না হয়। কেন ও এটা করতে পারেনি? রাহুল দ্রাবিড়ের আমলে কখনও এই ফলাফল ভাবা যেত? রাহুল দ্রাবিড় ওঁর হাতে দলটা তুলে দিয়েছেন। কিন্তু, সেই দলটাকে কোনওভাবেই এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। আর, সেটা হয়নি কোচিংয়ে অভিজ্ঞতার কারণে।'
২০২৪ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে তৃতীয় আইপিএল জয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার পরে গম্ভীর ভারতীয় দলের কোচ হওয়ার সুযোগ পান। প্রাক্তন ওপেনার আইপিএলে লখনউ সুপার জায়ান্টস এবং কেকেআরের মেন্টর ছিলেন। আর, এটা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন মনোজ তিওয়ারি। তিনি বলেছেন, 'কোচিং আর মেন্টরিংটা এক না। এনিয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার কোনও জায়গাই নেই। ভারতীয় দলের কোচ হওয়ার আগে, ও কি প্রথম-শ্রেণির ক্রিকেট বা আইপিএল বা বিশ্বের কোথাও কোচিং করেছে? ও কি কোনও দলের কোচ ছিল? মেন্টরিং এবং কোচিং সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার। দুটোকে মিশিয়ে ফেললে হবে না। ওঁর যখন কোচিংয়ের অভিজ্ঞতাই নেই, ওঁর কাছে ভালো পারফর্ম আশা করছেন কী করে? যা হওয়ার তাই হচ্ছে। এখন ফলাফল সবাই দেখছে। ও যদি ভুল থেকে শিক্ষা নেয়, পরবর্তী সিরিজ থেকে নিজেকে বদলায়, তবেই ভালো ফল হতে পারে। শেষ পর্যন্ত আমাদের দেখতে হবে, ও আদৌ দীর্ঘদিন ধরে কোচিং করছে কি না!'
কিন্তু, তিনি গম্ভীরকে 'ভণ্ড' বললেন কেন? সেটাও জানিয়েছেন মনোজ তিওয়ারি। বাংলার ডানহাতি ব্যাটার বলেছেন, গম্ভীরের কথার এবং কাজে কোনও মিল নেই। ও নিজেই সহকারি কোচ এবং বোলিং কোচ হিসেবে রায়ান টেন ডোসচেট ও মর্নে মরকেলকে বেছে নিয়েছে। এই ব্যাপারে মনোজ তিওয়ারি বলেন, 'কেন আমি ওঁকে ভণ্ড বলেছি? ওঁর সাক্ষাৎকারটার কথা একবার ভাবুন। এক সাক্ষাৎকারে ও বলেছিল, এই সব বিদেশি কোচ, যাঁরা বিদেশ থেকে এসেছে, তাঁদের মধ্যে ভারত নিয়ে কোনও আবেগ নেই, কোনও অনুভূতি নেই। ওঁরা অর্থ রোজগার আর উপভোগের জন্য ভারতে এসেছে। অথচ, যখন ওঁর কাছে সমস্ত ভারতীয় কোচ এবং সমস্ত ভারতীয় বংশোদ্ভূত সাপোর্ট স্টাফদের বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল, ও রায়ান টেন ডোসচেটের নাম বলল। মর্নে মরকেলকে বেছে নিল। আসলে, ওঁর কথার সঙ্গে কাজের কোনও মিল নেই। সেই জন্যই আমি ওঁকে ভণ্ড বলেছি।'
তিওয়ারির অভিযোগের পর নীতীশ রানা ও হর্ষিত রানা সোশ্যাল মিডিয়ায় গম্ভীরের হয়ে সুর চড়িয়েছিলেন। তিওয়ারি একে 'পিআর গেম' বলে অভিযোগ করেছেন। এই ব্যাপারে মনোজ বলেন, ওঁরা দু'জনেই কেকেআরের হয়ে গম্ভীরের অধীনে খেলেছে। স্বাভাবিকভাবেই ওঁরা কেকেআরের অধিনায়ক হিসেবে দুটো আইপিএল জেতা গম্ভীরের হয়েই বলবে।' এই ইস্যুতে হর্ষিত রানাকেও আক্রমণ করেছেন মনোজ। তিনি বলেছেন, 'কেন নীতীশ ও হর্ষিত রানা গম্ভীরকে সমর্থন করবে না? হর্ষিত আকাশদীপের জায়গায় পার্থে খেলেছে। এটা কীভাবে সম্ভব? আকাশদীপ কী ভুল করেছিল? ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত বোলিং করেছে। নতুন একজন ফাস্ট বোলার সবসময় পেস-সহায়ক পিচে বল করার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু, তাঁকেই বাদ দিয়ে হর্ষিতকে খেলাল গম্ভীর। হর্ষিত তো প্রথম-শ্রেণির ক্রিকেটেই তেমন একটা খেলেনি। সেই তুলনায় আকাশদীপের রেকর্ড দুর্দান্ত।'
গম্ভীরের পিআর ইস্যুতেও মুখ খুলেছেন মনোজ। তিনি বলেছেন, 'ও যে পিআরের ওপর ভর করে চলে, সেটা তো স্পষ্ট। আমি তো ভুল কিছু বলিনি। ওঁর পিআরটাই এমন, যেটা কারও নেই। যখন কেউ ওঁর বিরুদ্ধে কিছু বলে বা সত্যি কথা বলে, তখন কিছু লোক গম্ভীরকে বাঁচাতে চলে আসে। এমন লোকজন, যাঁরা যে লোকটা বলেছে, তাঁকে সরাসরি চেনেও না। এতেই পিআরটা স্পষ্ট। আমি কিন্তু শুধুমাত্র তথ্যের ওপর নির্ভর করেই যা বলার বলেছি।'
আরও পড়ুন- ইংল্যান্ড সিরিজে বিশ্রাম দিন, আগরকরকে কাতর আর্জি রাহুলের, তুমুল জলঘোলা
তিওয়ারি ২০১৫ সালে রঞ্জি ম্যাচ চলাকালীন গম্ভীরের সঙ্গে তাঁর ঝগড়ার প্রসঙ্গেও মুখ খুলেছেন। মনোজের অভিযোগ, গম্ভীর তাঁর পরিবারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। এমনকী, সৌরভ গাঙ্গুলি সম্পর্কেও গম্ভীর খারাপ কথাবার্তা বলেছেন। এই প্রসঙ্গে মনোজ বলেন, 'দিল্লিতে রঞ্জি ম্যাচ চলাকালীন ও আমার সঙ্গে মারামারি করেছিল। তখন সবাই গম্ভীরের মুখের ভাষা শুনেছে। ও সৌরভ গাঙ্গুলি সম্পর্কেও খারাপ কথাবার্তা বলেছে। ও আমার পরিবারকে গালি দেওয়ার পরও পিআরের কিছু লোক ওঁর হয়ে সুর চড়িয়েছিল। আমি এই কারণেই পিআরের কথা বলছি। আমার সোজা কথা, প্লেয়িং ইলেভেনের বাছাইটা ঠিকঠাক হচ্ছে না। আকাশদীপের বদলে হর্ষিত রানাকেই যদি খেলানো হয়, হর্ষিত যদি এতই ভালো হয়, তবে হর্ষিতকে বাকি সিরিজে খেলাল না কেন গম্ভীর? দেবদত্ত পারিক্কলকে কীভাবে টেস্ট দলে ঢোকানো হয়েছিল, সবাই জানে। ও তো হিসেবের বাইরে ছিল। অভিমন্যু ইশ্বরন ছিল, ছেলেটা এত রান করেছে, তাঁকে কেন খেলানো হল না? এই সবই ঘটছে। ফলাফল এখন সবার সামনে।'