Advertisment

বাবার মৃত্যু লোহার মত শক্ত করেছে সিরাজকে, জীবন বাজি রাখছেন প্রতি ম্যাচেই

বাবার মৃত্যুর পর মানসিকভাবে অনেক শক্ত হয়ে গিয়েছেন মহম্মদ সিরাজ। বল হাতে একের পর এক টেস্টে নিজেকে প্রমাণ করে চলেছেন হায়দরাবাদি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ভারতীয় দলের হয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল মহম্মদ সিরাজের। তিনি যে বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা তারকা, তা প্ৰথম টেস্টেই বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। সেই টেস্ট সিরিজে অস্ট্রেলিয়াকে হেলায় হারিয়েছে ভারত। সেই জয়ের কান্ডারি হিসাবে ছিলেন ঋষভ পন্থ, শুভমন গিলরা। একই সঙ্গে ভারতীয় দলের অনেক ক্রিকেটাররাই প্রশংসা কুড়িয়েছেন এই জয়ে। তবে সবার মাঝেও নজর কেড়েছেন ভারতীয় দলের অভিষিক্ত পেসার মহম্মদ সিরাজের অনবদ্য পারফরম্যান্স।

Advertisment

প্রথমত অস্ট্রেলিয়া সফরে যাওয়ার পরেই বাবার মৃত্যুর খবর পান সিরাজ। তবুও অস্ট্রেলিয়ার মাটি থেকে ফিরে দেশে ফিরে আসেননি তারকা পেসার। সেই শোক বুকে আঁকড়ে ধরে রেখেই সব ফরম্যাটের ক্রিকেটে খেলেছেন সিরাজ। শুধু তাই নয় ভারতীয় দলের হয়ে নিজের সেরাটা উজাড় করে দিয়েছেন এই ক্রিকেটার। ২২ গজের যোগ্যতা প্রমানের মাপকাঠিকে হেলায় হারাতে চাননি এই পেসার। চেয়েছিলেন শুধু তার বাবার স্বপ্ন পুরন করতে। যিনি হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ছেলেকে ক্রিকেটার হিসাবে দেখার শেষ ইচ্ছা নিয়েই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ার হারে শিক্ষাই নেয়নি ইংল্যান্ড, ভারতের বিরুদ্ধে দিতে হল একই ভুলের মাশুল

নিজেকে যখন ভারতীয় দলের হয়ে উজাড় করে দিতে প্রাণাতিপাত করছেন হায়দরাবাদি স্পিডস্টার, সেই সময়েই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সিরাজকে নিয়ে অযাচিত বিতর্ক তৈরি হয় অজি সমর্থকদের বর্ণবিদ্বেষী আচরণে। সেই বির্তক সরিয়েই গাব্বার মাটিতে ভারতের ঐতিহাসিক জয়ের পিছনে অবদান রাখেন সিরাজ। দুরন্ত বোলিং করে এক ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে দেশকে জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান স্পিডস্টার। ব্যক্তিগতভাবে ওঠানামার আঁচ ক্রিকেট কেরিয়ারে পড়তে দেননি সুপারস্টার।

ভারতীয় ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ সিরাজের কাহিনী চোখ ভিজিয়ে দেয়, আবেগে মুড়ে দেয় ক্রিকেট ভক্তদের। সদ্য শেষ হওয়া লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে ভারতের জয়ের সময় আটটি উইকেট তুলে নিয়ে সিরাজ দেখিয়েছেন যে অস্ট্রেলিয়ায় তার সাফল্য নেহাত ফ্লুক ছিল না। লম্বা রেসের ঘোড়া তিনি। সিরাজের এই জীবনযুদ্ধের কাহিনীই তুলে ধরা হল ‘মিশন ডমিনেশন: আন আনফিনিশড কোয়েস্ট’- এ।

আরও পড়ুন: এই পাঁচ তারকা না থাকলে লর্ডসে ভারতের কীর্তি সম্ভবই ছিল না, চিনে নিন সুপারস্টারদের

সিরাজেরঅস্ট্রেলিয়া সফরের সময়ই লিভারের অসুখে মারা যান। বাবা ছিলেন তাঁর প্রিয় বন্ধু। ভারতীয় দল বরাবরই সেকথা জানত। বইটিতে লেখা হয়েছে, "অস্ট্রেলিয়া সফরে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন সময় নভেম্বরে সিরাজের বাবা মারা যান। সেই সময় দলের সতীর্থরা কোয়ারেন্টিন নিয়মের জন্য তাঁর পাশে থেকে তাকে মানসিক ভাবে তাকে সাহায্য করতে পারেননি। কড়া পুলিশি পাহারায় দলের প্রত্যেক সদস্যকে থাকতে হয়েছিল। যাতে ভারতীয় ক্রিকেটাররা নিভৃতবাসের নিয়ম লঙ্ঘন করতে না পারেন। এমন ভাবে ভারতীয় ক্রিকেটারদের ওপর নজরদারি চালানো হয়েছিল, যেন তারা অপরাধী। অস্ট্রেলিয়ায় সংক্রমণ ছড়াতে পারেন। সেই কঠিন সময় সিরাজ একাই যুঝেছিলেন।"

বইটিতে আরও বলা হয়েছে, “সতীর্থরা তার সঙ্গে দিনের বেশিরভাগ সময়ে ভিডিও কলে কথা বলতেন যাতে সিরাজকে মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখা যায়। সতীর্থরাও সিরাজকে নিয়ে উদ্বেগের প্রহর কাটাচ্ছিলেন। একমাত্র ফিজিও নীতিন প্যাটেলের সঙ্গেও সামনাসামনি বসে সমস্ত দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ ছিল সিরাজের।"

বইটিতে সেই ঘটনা বিস্তারিত জানিয়ে বলা রয়েছে, “সিরাজ বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে মানসিকভাবে খুবই ভেঙে পড়েন। কিন্তু তিনি কখনই হাল ছাড়েননি। তিনি দেশের জার্সিতে সেরা পারফর্ম করেই বাবার ইচ্ছা পূরণ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। যখন মেলবোর্ন টেস্টে অভিষেকের সুযোগ আসে, তার পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করেন।

অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্ট সিরিজে ১৩ টি উইকেট নিয়ে রাতারাতি তারকা হয়ে ওঠেন সিরাজ। সিরিজ চলাকালীন তিনি ছিলেন ভারতের সবচেয়ে সফল বোলার। দুমাসের অস্ট্রেলিয়া সফর সিরাজকে কিশোর থেকে প্রকৃত মানের ক্রিকেটার করে তোলে। তারপর তাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

আরও পড়ুন: রবিনসনকে সিঁড়িতেই ধাক্কাধাক্কি! মাঠের ঝামেলা বাইরে নিয়ে বেনজির বিতর্কে কোহলিরা

সেই বইয়ে আরও উল্লেখ করা হয়েছে কিভাবে ঋষভ পন্থ এবং নভদীপ সাইনি দিল্লির হয়ে কঠিন সময়ে তাদের অনবদ্য পারফরম্যান্স মেলে ধরেছেন সিরাজেরও আগে। চেতেশ্বর পূজারা তাঁর মায়ের মৃত্যুর কয়েকদিনের মধ্যে কীভাবে নিজেকে সামলে অনূর্ধ্ব ১৯ ম্যাচ খেলেন। পায়ে চোট লাগা সত্ত্বেও হনুমা বিহারীকে ফিল্ডিং কোচ আর শ্রীধর নির্দেশ দেন, দলের প্রয়োজনে সিডনি টেস্ট তাঁকে ব্যাট হাতে নেমে দলকে বাঁচাতেই হবে। ক্রিকেটের এই সমস্ত রোমহর্ষক কাহিনীই তুলে ধরা হয়েছে এই বইয়ে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Cricket News Indian Cricket Team Mohammed Siraj
Advertisment