শুধু শিল্পের দেবতাই নন, সর্বজ্ঞ-সর্বদর্শী বিশ্বকর্মা কি নিজেই ব্রহ্মা?

তিনিই নাকি গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নকশা তৈরি করেছিলেন।

তিনিই নাকি গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নকশা তৈরি করেছিলেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
VISWAKARMA

কেউ বলেন দেবশিল্পী। কেউ বলেন দেবতাদের ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু, বিশ্বকর্মা যে আসলে কী আর কী হন, তা বোঝাই দায়। কেন একথা বলা? পুরাণ মতে তিনি ব্রহ্মাপুত্র। আবার তিনিই নাকি গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নকশা তৈরি করেছিলেন। শুধু কি তা-ই? শিবের ত্রিশূল, বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র, ইন্দ্রের বজ্র, কার্তিকের অস্ত্র, কুবেরের অস্ত্র, দেবপুরী। মায়, দেবতাদের বাহন পর্যন্ত তাঁর তৈরি। হিসেবমতো তাঁকেই তো তাহলে সৃষ্টিকর্তা ধরা উচিত। যদিও সৃষ্টিকর্তা ধরা হয় ব্রহ্মাকে।

Advertisment

অন্য দেবতাদের উপস্থিতি ধীরে ধীরে কমলেও, মহাকাব্যের সময় থেকে মঙ্গলকাব্য- তিনি স্বশরীরে এসে নানা ক্যারিশমা দেখিয়ে গিয়েছেন। ঠিক কীরকম? ব্রহ্মার পুষ্পক রথ তিনি নির্মাণ করেছিলেন। রামায়ণের লঙ্কা নগরী তাঁর তৈরি। মহাভারতে পাণ্ডবদের মায়া সভা, কৃষ্ণের দ্বারকাও তাঁর তৈরি। পুরীর জগন্নাথমূর্তি, এমনকী মঙ্গলকাব্যে চাঁদ সদাগরের ছেলে লক্ষ্মীন্দরের বাসরঘরও নাকি তাঁরই তৈরি। শাস্ত্রমতে তিনি সব ধরনের শিল্পের দেবতা, সর্বদর্শী ও সর্বজ্ঞ। নিজেই চতুঃষষ্ঠিকলা, স্থাপত্যবিদ্যা আর উপবেদ। ঋকবেদেও তাঁর উল্লেখ আছে।

এমন দেবতা, যাঁকে ত্রিদেব কী, দ্বিদেব বা আদিদেব বললেও বাড়াবাড়ি হবে না। অথচ, সেই দেবতাই যেন শাস্ত্র অনুযায়ী, ইন্দ্রের সভায় কোনওমতে স্থান পাওয়া এক দেব মাত্র। অনেকে তো তাঁকে স্বর্গের ছুতারও বলে মনে করতেন। সেখান থেকে অবশ্য আধুনিক যুগে বিশ্বকর্মার সম্মান কিছুটা হলেও বেড়েছে। স্বর্গের প্রকৌশলী বা ইঞ্জিনিয়ারের মর্যাদা ভক্তদের কাছে পেয়েছেন। কারখানা, শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে দোকানপাট- যেখানে যন্ত্রপাতি আছে, আধুনিক যুগে সব জায়গাতেই বিশ্বকর্মার পুজো হয়।

আরও পড়ুন- ঘনজঙ্গলের ভিতরে দুর্গা আরাধনা, অসম্ভবকেও নাকি সম্ভব করেন দেবী শ্যামরূপা

Advertisment

আর, এই দেবতাদের ইঞ্জিনিয়ারের তকমা থেকেই বিশ্বকর্মার আরাধনায় মেতে ওঠে বাঙালি। তবে, বাঙালির বিশ্বকর্মা উত্তর ভারতীয়দের বিশ্বকর্মার মত নয়। বাঙালির বিশ্বকর্মার বাহন হাতি। সুঠাম চেহারার এই দেবতা যেন আরেক কার্তিক ঠাকুর। তিন-ধনুকের বদলে যাঁর হাতে ছেনি, হাতুড়ি। আর, অবাঙালির বিশ্বকর্মা যেন একমুখের ব্রহ্মা। সেই বয়স্ক চেহারার লম্বা পাকা দাঁড়ি, বাহন হাঁস, হাতে বইপত্র আর কলম।

Temple Industry viswakarma puja