হিন্দু পুরাণ অনুসারে জ্যোতির্লিঙ্গ হল অনন্ত এবং অখণ্ড সত্য। ভগবান শিব যেখানে অগ্নিসদৃশ স্তম্ভ হিসেবে প্রকাশিত হয়েছিলেন, সেখানেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরগুলো। বিশ্বের মোট ৬৪টি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে ১২টি প্রধান বলেই বিশ্বাস শিবভক্তদের। সেভাবেই প্রকাশিত হয়েছিল ওঙ্কারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ। মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর স্টেশন থেকে ৭৮ কিলোমিটার দূরে ওঙ্কারেশ্বর মন্দির। পাঁচতলা এই মন্দিরের গর্ভগৃহেই রয়েছে শিবলিঙ্গ। জাতিধর্ম নির্বিশেষে সবাই এখানকার শিবলিঙ্গ স্পর্শ করে পুজো দিতে পারেন। সারা বছর ধরেই পুণ্যার্থীরা এখানে পুজো দিতে আসেন।
হিন্দু শাস্ত্রমতে বিন্ধ্যাচল পর্বতমালার রক্ষক অসুর বিন্ধ্য নিজের পাপ স্খলনের জন্য মহাদেবকে প্রসন্ন করেছিলেন। তিনি বালি ও পলির মিশ্রণে একটি শিবলিঙ্গ তৈরি করেছিলেন। শিব তাঁর তপস্যায় প্রসন্ন হয়ে দুটি রূপে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। একটি রূপ হল ওঙ্কারেশ্বর, অপরটি অমরেশ্বর বা মমলেশ্বর। নদীগর্ভের পলি ঘনীভূত হয়ে এখানে দেবনাগরী 'ওঁ' এর আকৃতি ধারণ করেছিল। সেই কারণে দ্বীপটির নাম রাখা হয় ওঙ্কারেশ্বর। সেখানেই আত্মপ্রকাশ করেছিল ওঙ্কারেশ্বর ও অমরেশ্বর। এখানকার মন্দিরে একটি পার্বতী ও একটি পঞ্চমুখী গণেশের মূর্তি রয়েছে।
আরও পড়ুন- দক্ষিণামূর্তি জ্যোতির্লিঙ্গ, যেখানে শিব নিজেই কালের বিনাশকারী রূপে অবস্থান করছেন
ওঙ্কারেশ্বর দ্বীপটি ২.৬ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত। মধ্যপ্রদেশের খাণ্ডোয়া জেলার এই মন্দির নর্মদা নদী ও তার উপনদী কাবেরীর তীরে মান্ধাতা দ্বীপে। যা ওঙ্কারেশ্বর দ্বীপ নামেও পরিচিত। দ্বীপটির নাম মান্ধাতা হওয়ার পিছনে রয়েছে এক কাহিনি। কথিত আছে, শ্রীরামচন্দ্রের পূর্বপুরুষ ইক্ষাকু বংশের রাজা মান্ধাতা ও তাঁর দুই সন্তান অম্বরীশ ও মুচুকুন্দ এখানেই ভগবান শিবকে সন্তুষ্ট করেছিলেন।
সেই থেকে ওই দ্বীপটির নাম হয়েছে মান্ধাতা দ্বীপ। আবার ওঙ্কারেশ্বরের কাছে রয়েছে আদি শংকরাচার্যর গুহা। যেখানে গুরু গোবিন্দপাদের দর্শন পেয়েছিলেন আদি শংকরাচার্য। সেই গুহাটি রয়েছে ওঙ্কারেশ্বর মন্দিরের ঠিক নীচে। সেখানে আদি শংকরাচার্যের একটি মূর্তিও রয়েছে। শিবভক্তদের কাছে ওঙ্কারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। শ্রাবণ মাসে এবং শিব চতুর্দশীর সময়ে এখানে ভক্তদের ব্যাপক ভিড় হয়।