কথিত আছে এই সতীপীঠের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সাধক বামাক্ষ্যাপার নাম। জড়িয়ে আছে বাংলার এই মস্ত সাধকের সিদ্ধিলাভের কাহিনি। বামাক্ষ্যাপা তখন তারাপীঠে সাধনা করছেন। সেই সময় তাঁকে স্বপ্নে দেখা দেন এই সতীপীঠের দেবী। সাধককে আদেশ দেন, দেবীর এই সতীপীঠের রূপে সাধনা করতে। তবেই সিদ্ধিলাভ করতে পারবেন বামাক্ষ্যাপা। এমনই জাগ্রত বীরভূমের সাঁইথিয়ার দেবী নন্দিকেশ্বরী।
কথিত আছে এখানে দেবীর গলার হার পড়েছিল। দেবী এখানে নন্দিনী নামে পরিচিত। আবার দেবীর নামটি শিবের বাহন নন্দীর থেকে তৈরি হয়েছে বলেও শোনা যায়। যার অর্থ দেবী শিবের বাহন নন্দী দ্বারা পূজিত। তাই দেবীর নাম নন্দিকেশ্বরী। ভৈরব এখানে নন্দিকেশ্বর।
বর্তমান মন্দিরটি ১৯১৩ সালে তৈরি হয়েছিল। দেবীর মূর্তিটি কালো পাথরের। মাথায় রূপালি মুকুট। আর, দেবীর তিনটি সোনালি চোখ। কিন্তু, ভক্তরা দেবীর কালো পাথরের গায়ে প্রার্থনার জন্য সিঁদুর দেন। সেই দেবীর পাথর পুরো লাল হয়ে গিয়েছে। আশির দশকে মন্দির প্রাঙ্গণেই শুরু হয় রথযাত্রা উৎসব। এরপর পুরী থেকে নিয়ে আসা হয় জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার দারুমূর্তি। নন্দিকেশ্বরী মন্দিরের প্রবেশপথের পাশেই অভিষেকের মাধ্যমে জগন্নাথদেবের মূর্তির প্রতিষ্ঠা হয়।
আরও পড়ুন- রহস্যময় শিবমন্দির, আজও যার রহস্য ভেদের চেষ্টা চলছে অবিরত
কীভাবে যাবেন এই মন্দিরে? অত্যন্ত পথ সহজ। বীরভূমের সাঁইথিয়া শহরের একদম প্রাণকেন্দ্র এই মন্দির। একটি বিশাল পবিত্র গাছ রয়েছে। যেখানে মনস্কামনা পূরণের জন্য ভক্তরা লাল ও হলুদ সুতো বাঁধেন। এখানে মন্দির তৈরির ঘটনাটিও স্বপ্নাদেশের সঙ্গে জড়িত। কথিত আছে জনৈক দাতারাম ঘোষকে দেবী স্বপ্নাদেশ দিয়ে নিজের অবস্থানের কথা জানিয়েছিলেন। তারপরই এখানে শুরু হয় পুজোপাঠ।
তবে নন্দিকেশ্বরী আদৌ সতীপীঠ কি না, তা নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ আছে। তন্ত্রচূড়ামণি গ্রন্থে নন্দীকেশ্বরীকে ৫১ সতীপীঠের অন্যমত বলে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু, আবার শিবচরিত গ্রন্থে নন্দিকেশ্বরীকে ২৬টি উপপীঠের অন্যতম হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সারাবছরই নন্দিকেশ্বরী মন্দিরে ভক্তদের যাতায়াত লেগেই থাকে। বিশেষ দিনগুলোতে ভিড় উপচে পড়ে। রথ উৎসবের সময় জমজমাট মেলা এই পীঠকে আলাদাভাবে চিনিয়ে দেয়।