তালিবান আফগানিস্তান দখলের সময় থেকে আইসিসির কাছে বারবার সাহায্য চেয়েও ফল মেলেনি। আতঙ্কে রাতে ঘুম উড়ে গিয়েছে আফগান মহিলা ক্রিকেট দলের ক্রিকেটার রোয়া সামিমের। ইতিমধ্যেই দেশ ছেড়েছেন মার্কিন ও ব্রিটিশ সেনা, গোটা আফগানিস্থানে কার্যত সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে তালিবানরা। সংবাদমাধ্যম কর্মরত থেকে শুরু করে সাধারণ মহিলা, রেয়াত করা হচ্ছে না কাউকেই।
গত কয়েকদিনে সেদেশের একের পর এক বে-আব্রু ছবি, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দেখানো ফুটেজে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বীভৎসতা। দেশ ছেড়েছেন মহিলা সাংবাদিক থেকে চিত্রপরিচালক, সেলিব্রিটি থেকে সাধারন মানুষ। তালিবানি বীভৎসতার স্মৃতি এখনও টাটকা তাদের মনে। সেরকমই একজন রোয়া সামিম। বর্তমানে তাঁর ঠাই কানাডার এক শরণার্থী শিবিরে। সেখানে তিনি বোনের সঙ্গে একসঙ্গে রয়েছেন। কে এই রোয়া সামিম?
আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়া-ভারতে কি খেলতে আসবে আফগানিস্তান, স্পষ্ট বার্তা দিল তালিবান
আফগান মহিলা ক্রিকেট দলের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর বোনও একই টিমের সদস্য। তালিবানি আতঙ্কের মধ্যে দেশ ছেড়ে আসা এই মহিলা আফগান ক্রিকেটার এবার ক্ষোভ উগরে দিলেন আইসিসি বিরুদ্ধে। এক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এব্যাপারে তিনি বিস্তর অভিযোগ জানিয়েছেন।
কি বলেছেন তিনি? তাঁর বক্তব্য, “তালিবানরা আফগানিস্তান দখলের সময় থেকে বহুবার মেইল করেছি আইসিসিকে। কাবুলে তালিবান শাসন জারি হওয়ার পর আইসিসিকে জানিয়েছি পরিস্থিতির কথা। বারবার অনুরোধ করেছি, 'আমাদের বাঁচান।' কিন্তু কোনও উত্তর পাইনি।"
আরও পড়ুন: আফগান ক্রিকেট দফতরে তালিবান হানা, দখল হয়ে গেল রশিদদের হেডকোয়ার্টার্স
তিনি আরও বলেন “টিমের বাকি যেসকল মহিলা সদস্য আফগানিস্তান ছাড়তে পারেননি, তাঁরা প্রবল আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন, ঘরের বাইরে পা রাখতে সাহস পাচ্ছেন না। ঘরের মধ্যে আতঙ্কে জুজু হয়ে বসে রয়েছেন। আমি তাদের নিয়ে খুবই চিন্তিত।"
এরপরে তিনি আরও যোগ করেছেন, “আইসিসির তরফ থেকে কোনও রকম সাহায্যের আশ্বাস না পাওয়ার পর আমি মেইল করে সামগ্রিক পরিস্থিতির কথা জানিয়েছি আফগান ক্রিকেট বোর্ডকে (এসিবি)। তারাও সেভাবে এগিয়ে আসেননি। জবাবে তাঁরা শুধু জানিয়েছেন, ‘'অপেক্ষা করুন'।" আইসিসি তরফে অবশ্য কোন ই-মেইল পাওয়ার কথা অস্বীকার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: তালিবানে ছত্রভঙ্গ গোটা আফগানিস্তান! চরম আশঙ্কার মধ্যেই নয়া কোচ ঘোষণা রশিদদের
কিছুটা আবেগতাড়িত হয়ে এই মহিলা ক্রিকেটার জানিয়েছেন, “যেদিন আফগানিস্তান ছেড়ে চলে আসি সেই দিনটা আমার কাছে এক গভীর বেদনার দিন। আমার দুচোখ বেয়ে শুধু জল ঝরে পড়ছিল অবিরত। আমার শহর, আমার কাজ, আমার খেলা, আমার সতীর্থ সবকিছুকে ফেলে আমি চলে যাচ্ছিলাম এক অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে। এখনো সেই দিনের ক্ষত বুকে নিয়ে বেড়াচ্ছি।"
আরও পড়ুন: তালিবানে ধ্বংসস্তুপ আফগানিস্তান, রশিদ-নবিদের আইপিএল খেলা নিয়ে জোরালো সংশয়
তালিবানি বর্বরতার স্মৃতি এখনও টাটকা সামিমের মনে তিনি ২০০১ সালের তালিবানি শাসনের কথা টেনে এনে জানিয়েছেন, মহিলাদের নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতা বলে প্রায় কিছুই ছিল না। বোরখা পরে বাড়ির কোন পুরুষ সদস্যের সঙ্গে ছাড়া একা বেড়ানোর কোন অনুমতি সেসময় ছিল না। খেলাধুলাট কার্যত কোনও প্রশ্নই ছিল না। তিনি বলেন, তালিবানরা এই ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানায়নি। এরপরই বিতৃষ্ণার সুর ধরা পরে এই মহিলা ক্রিকেটারের গলায়। তিনি বলেন, “তালিবানরা মেয়েদের পড়াশোনার বিরুদ্ধে। তাহলে তারা কীভাবে একটি মহিলা ক্রিকেট দল চাইতে পারে?"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন