Mamata Banerjee: ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ মমতার, 'এনআরসির মতো ষড়যন্ত্র চলছে!' কেন্দ্রকে তুলোধোনা বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর। ২০২৫ সালের শেষদিকে বিহারে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগেই নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধনের কাজ শুরু হয়েছে বিহার সহ ছয় রাজ্যে। আর এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে এবার সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি অভিযোগ করেছেন, "বিহার সহ ছয়টি রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধনের অজুহাতে নির্বাচন কমিশন সারা দেশে এনআরসির মতো প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে"।
কমিশনের নিয়ম অনুসারে, ২০০৩ সালের ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম ছিল না, তাঁদের জন্মস্থানের প্রমাণের নথি দিতে হবে। ২০০৩ সালের পরে যাঁদের ভোটার তালিকায় নাম ঢুকেছে বা যাঁরা নতুন আবেদন করছেন, তাঁদের একটি ফর্ম ফিল আপ করে জমা দিতে হবে। সেখানেই এমন কিছু শর্ত রয়েছে, তা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে জন্মগ্রহণকারী ভোটারদের জন্মতারিখ ও জন্মস্থানের উল্লেখ করে প্রামাণ্য নথি দিতে হবে। আর তার পরে জন্মগ্রহণকারীদের ব্যক্তিগত প্রমাণপত্র দিতে হবে, তার সঙ্গে বাবা-মায়ের নথিপত্রও দিতে হবে। বাবা-মায়ের জন্ম শংসাপত্র চাইছে নির্বাচন কমিশন, এটা আদতে এনআরসির মতো ষড়যন্ত্র।” তিনি মনে করছেন, এই পদক্ষেপের ফলে দরিদ্র, পরিযায়ী শ্রমিক এবং তরুণ ভোটাররা ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়বে"। পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করেন, 'ওড়িশার কটকে বাংলায় কথায় বলার অভিযোগে ১০০ জন পরিযায়ী শ্রমিককে ডিটেনশন ক্যাম্পকে আটকে রেখে দিয়েছে। বালেশ্বরে ১৭ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে'। বাংলা ভাষায় কথা বলা কী অপরাধ প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘায় রথযাত্রার এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মমতা বলেন—“কমিশনের দেওয়া নির্দেশিকায় বাবা-মায়ের জন্ম শংসাপত্র জমা দিতে বলা হচ্ছে। এভাবে ভোটারদের বঞ্চিত করা গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক।” তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “পরিযায়ী শ্রমিক বা দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা কোথায় পাবে বাবা-মায়ের সার্টিফিকেট?”
বিহার থেকে শুরু, লক্ষ্য বাংলা? প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী
নির্বাচন কমিশনের বিবৃতি অনুযায়ী, অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের চিহ্নিত করতেই এই পদক্ষেপ। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতার আশঙ্কা, “এই প্রক্রিয়া বিহার থেকে শুরু হলেও, তা ভবিষ্যতে দেশের সব রাজ্যে এবং বিশেষত বাংলায় বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। কারণ বিজেপি প্রান্তিক ভোটারদের ভয় পায়।” মমতা আরও অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন একতরফা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এবং বিরোধী দলগুলোর মতামতের তোয়াক্কা করছে না। তিনি আরও অভিযোগ করেন, “তৃণমূলের বুথ এজেন্টদের তালিকা চাওয়া হয়েছে, আমরা তা দিইনি। কেন দেব? এসব বিজেপির ষড়যন্ত্র।”
সবশেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি সমস্ত বিরোধী দলকে এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক করছি। নথিগুলো ভালো করে দেখুন। এটা গণতন্ত্র ধ্বংসের সিগন্যাল। ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার এক বিপজ্জনক খেলা শুরু হয়েছে।” মমতা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বিজেপির প্রচারক হিসেবে কাজ করার এবং একতরফা সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভিযোগ করেছেন।