সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে মোট তিনটি ছবি - প্রতিদ্বন্দ্বী (১৯৭০), গণশত্রু (১৯৮৯), এবং আগন্তুক (১৯৯১)। সত্যজিৎ-পুত্র সন্দীপের সঙ্গে অদ্যাবধি চারটি ছবি - হিটলিস্ট (২০০৯), গোরস্থানে সাবধান (২০১০), ডবল ফেলুদা (২০১৬), এবং প্রফেসর শঙ্কু ও এল ডোরাডো (২০১৯)। শেষের তিনটি ছবিই সত্যজিৎ-সৃষ্ট চরিত্র ভিত্তিক। ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়ের কর্মজীবনের সঙ্গে যে সত্যজিৎ রায় ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে সত্যজিতেরই সমসাময়িক আরও এক কিংবদন্তী পরিচালক মৃণাল সেনেরও সান্নিধ্য পেয়েছেন তিনি। সত্যজিতের শতবর্ষের সূচনার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে কথোপকথনে ধৃতিমান:
প্রোফেসর শঙ্কুর মতো বাঙালির আইকন একটা চরিত্র, যার বড় পর্দায় কোনও টেম্পলেট নেই। আপনার মতে ভালো না খারাপ? কীভাবে তৈরি করলেন নিজেকে?
আমি বলব সুবিধে হয়েছে। যাকে 'রেফারেন্স পয়েন্ট' বলে, সেগুলো একটু গোলমেলে হতে পারে, নানারকম সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তুলনা উঠে আসতে পারে মানুষের মনে, এবং মানুষ শঙ্কুর মতো আইকনিক চরিত্রের ক্ষেত্রে তুলনা করেই থাকেন সচরাচর, কারণ শঙ্কুর গল্প বহুপঠিত, অত্যন্ত পরিচিত। সুতরাং মানুষের মনে শঙ্কু সম্পর্কে একটা পূর্বনির্ধারিত ধারণা রয়েইছে, বিশেষ করে 'সন্দেশ' পত্রিকায় সত্যজিৎ রায়ের নিজেরই করা স্কেচ-এর দৌলতে। অতএব সিনেমায় কোনও রেফারেন্স পয়েন্ট না থাকাটা আমার কাছে অন্তত সুবিধেই মনে হয়েছে।
ছবি করার আগে নিজে কতটা শঙ্কু পড়েছিলেন?
এর পেছনে একটা গল্প রয়েছে। শঙ্কুর গল্পগুলো যেহেতু ডায়েরি আকারে লেখা, সেহেতু সেগুলো পড়ে আমরা শঙ্কু সম্পর্কে খুব একটা জানতে পারি না। আমরা এটুকু জানি যে তিনি অত্যন্ত উচ্চমানের বৈজ্ঞানিক হওয়া সত্ত্বেও খ্যাতির আলো বা লাইমলাইট, এবং পৃথিবীর যে কোনও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ, স্বেচ্ছায় ত্যাগ করে গিরিডিতে নিজের পৈতৃক ভিটেয় তাঁর নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে বসে গবেষণা করেন। কিন্তু এছাড়া গল্প থেকে আমরা ব্যক্তি শঙ্কুর খুব একটা হদিস পাই না।
এর একমাত্র ব্যতিক্রম 'স্বর্ণপর্ণী' নামে শেষের দিকের একটি গল্প, যেখানে শঙ্কু স্মৃতি রোমন্থন করেন তাঁর বাবা ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু সম্বন্ধে। সেখানে তাঁর বাবার কিছু আদর্শ, মতবাদ, নীতিবোধের কিছুটা প্রতিফলন, আমরা শঙ্কুর কাছ থেকে পাই। এবং ব্যক্তিগতভাবে যখন আমি ছবিটার জন্য তৈরি হচ্ছি, তখন এই ব্যাপারটা আমার কাছে খুব জরুরি হয়ে ওঠে। কারণ আমার মনে হয়েছিল শঙ্কু তাঁর বাবার মূল্যবোধ অন্তঃস্থ করেছেন, এবং তা তাঁর চরিত্রেরও অন্যতম প্রধান দিক হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন, ”এমন ছোট কদর্য মন নিয়ে শিল্পী হওয়া যায়?” ফের সরব স্বস্তিকা
তবে এই সম্ভাবনাটা সবসময়ই মাথায় ছিল যে যাঁরা শঙ্কু পড়েছেন, তাঁরা আমার ব্যাখ্যার সঙ্গে একমত হতেও পারেন, নাও হতে পারেন। ধরুন আমরা জানি যে শঙ্কুর বেশিরভাগ গল্পেরই পটভূমি বিদেশ, এবং অধিকাংশ গল্পেই উপস্থিত থাকেন তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী, যাঁদের একজন ইংরেজ, আরেকজন জার্মান। যেহেতু ঘটনার প্রেক্ষিত বিদেশ, সেখানে সব সংলাপ তো বাংলায় হওয়া সম্ভব নয়, ইংরেজির একটা বড় ভূমিকা থাকবেই। এখন শঙ্কু কতটা ইংরেজি বলেন, একেবারে ভারতীয় ইংরেজি বলেন, না সাহেবি ইংরেজি বলেন, সে সম্বন্ধে দ্বিমত থাকা স্বাভাবিক। এগুলো মাথায় রাখতে হয়েছিল।
এছাড়াও আমার জন্য আরেকটা 'ক্লু' ছিল সত্যজিৎ রায়ের ব্যক্তিসত্তা। আমরা জানি, সত্যজিৎ রায় দুটি ক্ষেত্রেই সমান স্বচ্ছন্দ ছিলেন - অর্থাৎ উনি পুরোপুরি বাঙালি ছিলেন, পাজামা-পাঞ্জাবি পরতেন, বাংলায় গল্প লিখতেন, সেদিক থেকে পুরোদস্তুর বাঙালি। আবার অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মঞ্চেও সমান আত্মপ্রত্যয়ী ছিলেন। এই যে দুই জগতের মধ্যে অনায়াস বিচরণ, সেটাও শঙ্কুর চরিত্রের ক্ষেত্রে আমার দিক নির্দেশ করেছে। আমার মনে হয়েছে, শঙ্কুও এরকমই ছিলেন, এবং সেভাবেই তাঁকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।
আরও পড়ুন, লকডাউনে তৈরি পায়েলের শর্ট ফিল্ম ‘একটি তারা’, গা ছমছমে দুঃস্বপ্নের গল্প
সত্যি বলতে, ছবিটা করার আগে, বা পরেও, আমি বলতে পারি না যে আমি শঙ্কুর সব গল্প পড়ে ফেলেছি। কিন্তু সেটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। সিনেমায় আমার যত কাজ আছে, তার সবটারই ভিত হলো পরিচালকের দর্শনের আমি যা বুঝেছি, এবং চিত্রনাট্যের প্রতি আমার আনুগত্য। মূল কাহিনীর প্রতি অতটা নয়। যখনই কোনও সাহিত্য-ভিত্তিক ছবিতে কাজ করেছি, যেখানে মূল কাহিনী আমার পড়া নেই, আমি বিশেষ করে নিশ্চিত করেছি যেন সেটা না পড়াই থাকে, কারণ আমার মনে কোনও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চাইনি।
এই প্রসঙ্গে সত্যজিৎ এবং সন্দীপ রায়, দুজনের সঙ্গেই কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে আপনার। দুজনের দর্শন বলুন বা পরিচালনা শৈলী, তাতে কতটা তফাৎ বা সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন?
যখনই সত্যজিৎ রায়ের কোনও গল্প নিয়ে কাজ করেছেন, তখন সেই গল্পের প্রতি প্রায় সম্পূর্ণ আনুগত্য বজায় রেখেছেন সন্দীপ, সে ফেলুদা হোক বা শঙ্কু। তার একটা কারণ ওই যে বললাম, যাঁরা ছবি দেখছেন তাঁরা প্রায় সকলেই গল্পগুলো পড়েছেন, সুতরাং সেখান থেকে খুব একটা সরে যাওয়ার জায়গা নেই বলেই সন্দীপের মনে হয়েছিল, খোল-নলচে পাল্টে দেওয়ার তো নয়ই। আমরা সেটা হতে দেখেছি রবার্ট ডাউনি এবং জুড ল'এর শার্লক হোমস-এর ক্ষেত্রে, তবে তা অনেক পরে। এখনও ফেলুদা বা শঙ্কুর ক্ষেত্রে সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময়টা আসে নি বলেই আমার বোধ হয়।
কাজের ধরনের কথা বলতে গেলে বলব, অনেকটাই সাদৃশ্য রয়েছে। দুজনেই অত্যন্ত গোছানো, প্রতিটা খুঁটিনাটিও স্ক্রিপ্ট-এর মধ্যে ধরা থাকে, শুটিং শুরুর আগে প্রতিটা জিনিস পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে সাজানো। সেদিক থেকে সাদৃশ্যই বেশি।
দুজনের তফাৎ কিন্তু খুব একটা চোখে পড়ে নি। স্বভাবতই আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক দুজনের সঙ্গে এক ধরনের ছিল না, তার অনেকটাই বয়সের তারতম্য জনিত। সন্দীপের সঙ্গে যেভাবে ইনফরমাল মেলামেশা, তাঁর বাবার সঙ্গে তা ছিল না। তবে কাজের ক্ষেত্রে খুব তফাৎ চোখে পড়ে নি।
আরও পড়ুন, আ রে অফ জিনিয়াস: সত্যজিতের জন্ম শতবর্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রকের যাত্রা শুরু
সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে মৃণাল সেনের তফাৎ? দুজনে সমসাময়িক, দুজনেই কালোত্তীর্ণ পরিচালক...
দুজনের সঙ্গেই আমার ছবি করতে শুরু করার আগেই পরিচয় হয়েছিল। ব্যক্তি হিসেবে দুজনকেই একটু-আধটু চেনার সুযোগ হয়েছিল। তবে দুজনের কাজের ধরন একেবারেই স্বতন্ত্র ছিল। মৃণালদা অনেক বেশি ইম্প্রোভাইজেশন-এর ওপর, তাৎক্ষণিক যা ঘটছে, তার ওপর নির্ভর করতেন। সত্যজিৎ রায় তার একেবারেই বিপরীত।
আমার সঙ্গে মৃণালদার প্রথম ছবি 'পদাতিক'। শুটিং শেষ হতে যখন আর দিন চার-পাঁচ বাকি, মৃণালদা তখনও ঠিক জানেন না ছবিটা কীভাবে শেষ হবে। কিন্তু তাতে যে তিনি খুব একটা বিচলিত, তাও নয়, কারণ এই অনিশ্চয়তাটা উনি সাদরে গ্রহণ করতেন। পছন্দ করতেন। ইউনিটের যাঁদের ওপর ওঁর বিশ্বাস ছিল, বা বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে, শুটিং চলাকালীনই ছবিটা নিয়ে আলোচনা করতেন, কোনটা বদলালে ভালো হয়, ভাবতেন।
আরও পড়ুন, ‘হ্যাপি বার্থডে মানিকদা’! শিল্পীর কল্পনায় অজানালোকে মধ্যরাতের সেলফি
অউটডোরে 'প্রতিদ্বন্দ্বী', প্রায় সম্পূর্ণ ইনডোরে 'গনশত্রু' এবং 'আগন্তুক'। এই দুই প্রেক্ষিতে কি পরিচালক সত্যজিৎ একই রকম ভাবে কাজ করতেন?
এটা বলা দরকার যে 'গনশত্রু'-র ইনডোর শুটিংয়ের প্রধান কারণ ছিল সত্যজিৎ রায়ের শারীরিক অবস্থা। ডাক্তারদের পরামর্শ, অসংখ্য বিধিনিষেধ মেনে তাঁকে কাজ করতে হয়েছে। 'প্রতিদ্বন্দ্বী'-তে আউটডোর, আক্ষরিক অর্থে ক্যামেরা হাতে নিয়ে শুটিংও হয়েছিল, সেখানে হয়তো ইনডোরে একটা শটের যতটা পরিকল্পনা করা যায়, ততটা যায় না। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিতে হয়। তবে তখনও কিন্তু উনি খুব নিশ্চিতভাবে জানতেন, ঠিক কী করতে চাইছেন। আর আমরা যে সময় শুটিং করছি, তখন কিন্তু রাস্তায়-ঘাটে কাজ করাটা অনেক সহজ ছিল। এখন অনেক বেশি প্ল্যান করতে হয়, পুলিশের অনুমোদন, ভিড় সামলানো, এইসব কিছুই তখন ছিল না।
বলা হয়, 'আগন্তুক' ছবিতে উৎপল দত্তের চরিত্রের মধ্যে দিয়ে সত্যজিৎ অনেকাংশেই তাঁর নিজস্ব দর্শন পর্দায় তুলে ধরেছেন। ছবির শুটিংয়ের সময় ক্যামেরার পেছনে, বা স্ক্রিপ্ট নিয়ে আলোচনার সময়, এই আত্মজীবনী-মূলক মনোভাবের কোনও চিহ্ন দেখেছিলেন কি?
এখানে দু-তিনটে প্রসঙ্গ এসে যায়। সত্যজিৎ রায়ের নানা বিষয়ে অগাধ পড়াশোনা ছিল, যার মধ্যে ছিল ইতিহাস, নৃতত্ব, ইত্যাদি। আমার যতদূর মনে আছে, সে সময় তিনি প্রখ্যাত নৃতত্ববিদ ক্লড লেভি-স্ট্রাউসের লেখা পড়ছিলেন, এবং লেভি-স্ট্রাউসের অধিকাংশ কাজই পৃথিবীর আদিম জাতি-উপজাতিদের নিয়ে। সেই লেখার একটা প্রভাব ওঁর ওপর অবশ্যই পড়েছিল, যে আমরা কাকে সভ্য বা অসভ্য বলব, সভ্যতার সংজ্ঞাই বা কী। এই সব প্রসঙ্গ ছবিতে এসেছে। আত্মজীবনীর একটা ভাব অবশ্যই এসেছে।
ছবিটাতে আমার চরিত্রটা তো খুব একটা বড় ছিল না, এবং তখনও উনি পুরোপুরি সুস্থ হন নি। আমায় ডেকেছিলেন, আমার যে গোটা দুয়েক সিন ছিল, সেগুলো পড়ে শোনাবেন। কিন্তু যেটা হলো, উনি প্রবল উৎসাহের বশে পুরো স্ক্রিপ্ট-টাই আমায় পড়ে শোনালেন। এবং তারপর বললেন, "জানো তো, আমি উৎপলকে বলেছি, যে এটা আমারই চরিত্র, সেটা বুঝে তোমাকে চরিত্রটাকে ফুটিয়ে তুলতে হবে, অভিনয় করতে হবে।" লেভি-স্ট্রাউসের প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের তত্ত্বেরও প্রভাব পড়েছিল এই চরিত্রে।
আমার মনে হয়, তখন যেহেতু সিনেমার বাইরে অনেকটা অবসর সময় পেয়েছিলেন, এই ব্যাপারগুলো নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন, চিন্তাও করছিলেন।
আরও পড়ুন, ‘আমার চতুর্থ সন্তানকে হারালাম’, ঋষির প্রয়াণে আশা ভোঁসলে
তাঁর ছবিতে পশ্চিমী সিনেমার প্রভাবের কথা সত্যজিৎ নিজে বহুবার বলেছেন, সেটা কীভাবে ফুটে উঠত বলে আপনার মনে হয়?
ওই প্রজন্ম তো ফিল্ম স্কুলে যান নি, ওঁরা ছবি করা শিখেছেন পড়াশোনা করে এবং ছবি দেখে। আমার ধারণা, হলিউডের কিছু পরিচালক, যেমন জন ফোর্ড, ফ্র্যাঙ্ক কাপরা, এঁদের ছবির বিষয়বস্তু তো বটেই, তবে ছবির টেকনিকও, সত্যজিৎ রায় খুব তীক্ষ্ণভাবে নজর করতেন। ওটাই ওঁর টিউটোরিয়াল ছিল। একটা ছবিকে কীভাবে দাঁড় করাতে হয়, তার কাঠামো, চিত্রনাট্য... ওঁর কাছে একটা ফিল্ম স্কুলের মতো ছিল।
'প্রতিদ্বন্দ্বী'র কিছু বিখ্যাত দৃশ্য, যেমন চাকরির ইন্টারভিউ, বা শেষ দৃশ্যটিও, বহুল আলোচিত। এই ধরনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যের আগে কোনোরকম বিশেষ নির্দেশ বা ব্রিফিং...?
না... না... ওঁর যে কাজের পদ্ধতি ছিল, তাতে শুটিং শুরু হওয়ার আগে উনি ছবির সঙ্গে জড়িত সকলকে, মানে কলাকুশলী, ইউনিটের অন্যান্য সদস্য, সকলকে একত্র করে স্ক্রিপ্ট শোনাতেন, কিছু বলার থাকলে বলতেন। এটুকুই, তারপর যা হতো শুটিংয়ের সময় হতো। এই ওয়ার্কশপ, অতিরিক্ত বিশ্লেষণ বা আলোচনা, এগুলোতে উনি খুব একটা বিশ্বাস করতেন না বলেই আমার ধারণা, এবং সত্যি কথা বলতে কী আমিও খুব একটা করি না।
সেটে কিছু অভিনেতাকে অনেকটা স্বাধীনতা দিতেন, কিছু বলার হলে শটের পরে বলতেন। এটা ওঁর একটা পরিচালনা পদ্ধতি ছিল। আবার কিছু অভিনেতাকে শট চলাকালীনই উনি পুঙ্খানুপঙ্খ ডিরেকশন দিতেন - "এবার থামো, মুখ তুলে তাকাও, হাসো..."। আমার ধারণা, আমি প্রথম দলে ছিলাম। মোটামুটি আমার মতন করেই কাজটা করতাম, কোনও কারণে ওঁর ঠিকঠাক না লাগলে একটু হয়তো আলোচনা হতো, নাহলে আমি পুরোপুরি নিজের সহজাত বোধ এবং তাৎক্ষনিক বোঝার ওপর নির্ভর করতাম। 'প্রতিদ্বন্দ্বী'র ইন্টার্ভিউ দৃশ্য বা শেষ দৃশ্য সম্পর্কেও সেটাই খাটে।
আরও পড়ুন, লকডাউনে তৈরি পায়েলের শর্ট ফিল্ম ‘একটি তারা’, গা ছমছমে দুঃস্বপ্নের গল্প
আমরা দর্শক হিসেবে পরবর্তীকালে এই দৃশ্যটাকে যে গুরুত্ব দিয়েছি, আপনি করার সময় কি ততটা দিয়েছিলেন?
ওই যে বললাম, আমি খুব বেশি বিশ্লেষণে বিশ্বাসী নই, তাই কাজ করার সময় আজকাল যেমন বলে, 'ইন দ্য মোমেন্ট', থাকাটা খুব প্রয়োজনীয়, বিশেষ করে ওই ধরনের দৃশ্যে। তখন ছবির সামগ্রিক কাঠামোয় এই দৃশ্যের গুরুত্ব কতটা, বা তার কী প্রভাব পড়তে পারে, এসব ভাবার অবকাশ থাকে না।
সত্যজিৎ রায়ের কোনও ছবি দেখে কোনও বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করার ইচ্ছে হয়েছে?
অনেক চরিত্রই, যেমন 'চারুলতা' বা 'ঘরে বাইরে'র পুরুষ চরিত্রগুলি দেখে হয়তো ইচ্ছে হয়েছে, তবে তার জন্য কোনও আক্ষেপ নেই।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন