আর ঢাক ঢাক গুর গুর নয়। একেবারে সরাসরি। বিধানসভা থেকে সাসপেন্ড হওয়ার পর বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে বলেই ফেললেন, "মোল্লাদের সরকার, মুসলমানদের সরকার, আনসারুল্লা বাংলার সরকার।" এতে স্পষ্ট ছিটেফোটা মুসলিম ভোটের আর তোয়াক্কা করছে না বঙ্গ বিজেপি। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে এই হিন্দু-মুসলিম ভোট ভাগাভাগি করেই নন্দীগ্রাম জয় হাসিল করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী, এমনই মত রাজনৈতিক মহলের। এবার সেই তত্ব সামনে রেখেই বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি বিরাট প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তারওপর এবার থাকছে পরশী দেশের হিন্দু-নির্যাতনের বড় ইস্যু।
বঙ্গে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির লক্ষ্য ছিল ২০০ আসন। ৭৭-এ থেমে গিয়েছিল মোদী-শাহের অশ্বমেধের ঘোড়া। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই নিয়ে বঙ্গ বিজেপির অন্তর্কলহ সামনে এসেছে। বছর ঘুরলেই ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন। এখন বাংলা সফরে রয়েছেন RSS প্রধান মোহন ভাগবত। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন হিন্দুত্ব ইস্যুকে ভর করেই যে বঙ্গ বিজেপি উৎরাতে চাইছে তা নেতৃত্বের বক্তব্যে স্পষ্ট। তারই মধ্যে RSS প্রধানের দীর্ঘ বঙ্গ সফর নয়া মাত্রা যুক্ত করেছে।
বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের প্রতিবাদে বাংলায় একাধিকবার পথে নেমেছে বিজেপি সহ হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো। উত্তাল হয়েছে কলকাতার রাজপথ। কলকাতায় বাংলাদেশে ডেপুটি হাই কমিশনে বিক্ষোভও দেখিয়েছে বিজেপি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সরাসরি 'মুসলমানের সরকার' বলা শুধু নয়, বিগত কয়েক মাস ধরেই তিনি বলছেন আর ৩-৪ শতাংশ হিন্দু ভোট পেলেই বাংলায় জয়ের মুখ দেখবে গেরুয়া শিবির। মোদ্দা কথা, শুধু হিন্দুদের ভোটের ওপর নির্ভর করেই জয় হাসিল করতে চাইছে বিজেপি। পাশাপাশি বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চাও আগের মতো সক্রিয় নয়। এই মোর্চায় মুসলিম সম্প্রদায়ের গুরুত্ব কমে গিয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত।
আরও পড়ুন- West Bengal News Live:'ধৈর্য ধরুন, আমি ফিরব, হত্যাকারীদের বিচার করব', ভার্চুয়াল বক্তৃতায় ফের বললেন শেখ হাসিনা
এমন পরিস্থিতিতে মোহন ভাগবতের বাংলা সফর কতটা এগিয়ে দিতে পারবে BJP-কে? এই প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। যদিও আরএসএস নেতৃত্বের বক্তব্য, রাজনীতির সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই। তাঁরা সামাজিক সংগঠন। সামগ্রিক ভাবে সমাজের উন্নয়নে মনোযোগী আরএসএস। আরএসএস জানিয়ে দিয়েছে, এবার তাদের লক্ষ্য গ্রামীণ ক্ষেত্রে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পুরসভায় ওয়ার্ড ভিত্তিক শাখা তৈরি করা। পাশাপাশি পুরনো আরএসএস কর্মীদের সক্রিয় করা।
এদিকে আরএসএসের মধ্যবঙ্গ প্রান্ত আয়োজিত বর্ধমানের জনসভায় দেখা গিয়েছে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সহ একাধিক বিজেপি নেতৃত্ব ও বিধায়কদের। প্রাক্তন রাজ্য বিজেপি সভাপতি ও প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ ঘোষ রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আগে আরএসএসের কর্মকান্ডেই যুক্ত ছিলেন। আরএসএস থেকে একাধিক নেতৃত্ব গেরুয়া শিবিরের রাজনীতিতে এসেছেন। সেক্ষেত্রে রুটিন সফরের কথা বলা হলেও ২০২৬-এর আগে মোহন ভাগবতের ১১ দিনের বাংলা সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে অভিজ্ঞ মহল।
আরও পড়ুন- Best Places to Visit Bengal in March: সামনের মাসেই ট্যুর-প্ল্যান? রইল মার্চে বেড়ানোর তাকলাগানো কয়েকটি জায়গার হালহদিশ
তবে এরই পাশাপাশি মোহন ভাগবত বাংলায় থাকাকালীন ফের বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের কলহ ফের প্রকাশ্যে এসেছে। বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের একটি ফেসবুক পোস্ট নিয়েই বিতর্কের সূত্রপাত। যদিও পরে সেই পোস্ট ডিলিট করে দওয়া হয় বলে খবর। শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য এই ইস্যুতে সেভাবে মুখ খুলতে চাননি। তবে দিব্যেন্দু অধিকারীর তরফ থেকে আইনি নোটিশ গিয়েছে ওই সাধারণ সম্পাদকের কাছে। কেন এমন সময়ে বিতর্ক সামনে আনা হল সেই নিয়ে গুঞ্জন অব্যাহত। একইসঙ্গে এবার দলের নয়া রাজ্য সভাপতি কে হবেন তা নিয়েও চর্চা অব্যাহত বঙ্গ বিজেপিতে।
২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির মুহূর্তেও যে ভাবে বঙ্গ বিজেপির দ্বন্দ্ব সামনে আসছে তাতে নীচুতলার নেতা-কর্মীরা বিভ্রান্তিতে পড়েছেন। সেক্ষেত্রে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের কার্যক্রমে বাস্তবে বিজেপির কতটা ফায়দা হবে তা নিয়ে সংশয় দেখছেন রাজনৈতিক মহল। তবে বঙ্গ রাজনীতিতে আরও বেশি হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ওপর ভরসা রাখছে বিজেপি। নেতৃত্বের ভূমিকায় স্পষ্ট, এই রাজ্যে মাত্র এক-দুই শতাংশ মুসলিম ভোটের আশাও কার্যত ছেড়ে দিয়েছে বিজেপি। বাংলাদেশ ইস্যু যে ২০২৬ বিধানসভা ভোটে বড় ফ্যাক্টর হবে তা নিয়ে আশাবাদী বিজেপি নেতৃত্বর বড় অংশ।
আরও পড়ুন- Kolkata Weather Today:প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস জেলায়-জেলায়, তুমুল দুর্যোগ শুরু কবে থেকে? চলবে কতদিন?
"মোল্লাদের সরকার, মুসলমানদের সরকার, আনসারুল্লা বাংলার সরকার", শুভেন্দুর এই বক্তব্যে যে সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা রয়েছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। রাজনৈতিক মহলের মতে, লক্ষ্য ২০২৬ বিধানসভা ভোট। লক্ষ্মীর ভান্ডারকে এই তত্ব কতটা বেগ দিতে পারবে, তা দেখতে অপেক্ষা করতে আরও একটা বছর।